চোখের যত্নে করণীয়
আমাদের চোখ অবস্থানগতভাবে সব সময় সুরক্ষিত। বাইরে থেকে যেটুকু দেখা যায়, সেটুকুও চোখের পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। এ ছাড়া চোখের পাপড়ি ও আইভ্রু চোখকে ধুলো-ময়লা থেকে রক্ষা করে। চোখের পানি সাধারণত ধুলাবালি ও রোগজীবাণু ধুয়ে ও ধ্বংস করে চোখকে সুস্থ রাখে। কিন্তু চোখ একটি অতীব প্রয়োজনীয় সেনসিটিভ অঙ্গ। তাই এই চোখ ভালো রাখতে নিজেদের আরও সচেতনতা প্রয়োজন।
চোখ যেকোনো আলোই কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রহণ করে নিতে পারে। কিন্তু চোখ ভালো রাখার জন্য কম আলো বা তীব্র আলোতে লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজকর্ম করা উচিত নয়। রাতে টেবিল ল্যাম্পের আলোতে লেখাপড়ার সময় ল্যাম্পটি দেয়ালের দিকে রেখে প্রতিফলিত আলোতে পড়া ভালো।
টিভি দেখার সময়ও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সম্পূর্ণ অন্ধকার কক্ষে টিভি দেখা ঠিক নয়। টিভি যে অবস্থানে তার পেছনের দেয়ালে একটি টিউব লাইট সংযোগ করা যেতে পারে। সাধারণত ৬-১০ ফুট দূর থেকে টিভি দেখা উচিত। একটানা অনেকক্ষণ টিভি দেখা উচিত নয়।
অতিরিক্ত প্রসাধনী চোখের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রসাধনী চোখে ব্যবহার করলে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস, ব্লেফারাইটিস, স্টাই ইত্যাদি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
মাথায় খুশকি থাকলে সপ্তাহে দুবার খুশকি-নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা খুশকি-মুক্ত রাখতে হবে। নইলে মাথার খুশকি থেকে চোখ আক্রান্ত হয়ে চোখে ব্লেফারাইটিস দেখা দিতে পারে।
সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি চোখের শত্রু। তাই সূর্যালোক থেকে দূরে থাকা উত্তম। রোদে গেলে সানগ্লাস পরা উচিত। যাঁদের এমনিতেই চশমা পরতে হয়, তাঁদের ফটোক্রোমেটিক লেন্স ব্যবহার করা আরামদায়ক হবে।
চোখ ভালো রাখতে প্রতিদিন কাজের শেষে ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ভালো ভাবে ধুয়ে ঘুমানো উত্তম।
যাঁদের চোখে চশমা প্রয়োজন, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে চশমা পরা উচিত। অনেকে মনে করেন, চশমা ব্যবহার করলে সারা জীবন চশমা ব্যবহার করতে হবে। তাই চশমা ব্যবহার করেন না। কিন্তু চোখের সমস্যা নিয়ে চলার চেয়ে চশমা ব্যবহার করাই চোখের ভালো নতুবা পড়াশোনা বা কাছের জিনিস দেখতে চোখে চাপ পড়ে। আসতে আসতে চোখ আরও খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে। এই চাপ চোখের ক্ষতি করতে থাকে। চশমা সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত। অস্বচ্ছ ও ফাটা লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।
মূলত ধুলোকণা, কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে ছোট খেলার বল নানা কিছু আছে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে। এসবের কারণে চোখে প্রথমে খচখচে, চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ে, তাকালে চোখ জ্বালা করে এবং চোখ বন্ধ রাখলে আরাম হয়, চোখ লাল হয়ে যায়। এমন অনুভূতি হলে সবাই, বিশেষ করে বাচ্চারা খুব ঘন ঘন চোখ কচলাতে বা চুলকাতে থাকে, এমন কাজটি একেবারেই করা যাবে না। দেখা যায় এমন সহজ কিছু পড়ে থাকলে কটনের পাতলা কাপড় একটু পেঁচিয়ে অন্যের সাহায্য নিয়ে আলতো করে বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে।
প্রবাদ আছে, মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না। কিন্তু মানুষ চোখ থাকতেও চোখের মর্যাদা বুঝে না। তাই আমাদের সুস্থভাবে চলাফেরার জন্য অবশ্যই চোখের যত্ন করতে হবে।