আজ ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর ৫২ তম জন্মদিন
ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ঋতুপর্ণা অভিনয় করেছেন একাধিক বাংলাদেশী ও হিন্দি চলচ্চিত্রেও। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ ও লেখালিখির সঙ্গেও জড়িত ঋতুপর্ণা।
১৯৭০ সালের ৭ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। অল্পবয়সেই চিত্রাংশু নামে একটি শিল্পবিদ্যালয় থেকে অঙ্কন, নৃত্য ও হাতের কাজে দক্ষতা অর্জন করেন। মাউন্ট কারমেল স্কুলে তার পড়াশোনা। পরে লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। তবে অভিনয় পেশায় মনোযোগ দেবার জন্য পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। বাল্যপ্রেমিক সঞ্জয় চক্রবর্তীকে ১৯৯৯ সালে বিবাহ করেন। সঞ্জয় মবিঅ্যাপস নামে কলকাতার একটি সিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা। থ্যালাসেমিয়া রোগাক্রান্ত শিশুদের সাহায্যার্থেও ঋতুপর্ণা নিরলস সহযোগিতা করে থাকেন। ঋতুপর্ণা আউটডোর খেলাধুলার সঙ্গেও যুক্ত। অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেন। বরাবরই তার সাজপোশাকের জন্য তিনি দর্শকমহলে উপহাসের পাত্রী হয়েছেন। ২০২১ সালে সরস্বতী পুজোর দিন তিনি মুক্তধারা ছবি থেকে নিজের সরস্বতী বেশের একটি ছবি তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করার পরে তার এই ছবির দৌলতে তিনি মানুষের উপহাসের পাত্রী হয়ে যান।
অভিনেতা কুশল চক্রবর্তীর বোন অনিন্দিতা পাল ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সহপাঠী যার সুবাদেই শ্বেত কপোত (১৯৮৯) বাংলা ধারাবাহিকে তে কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে প্রথমবার অভিনয়ের সুযোগ পান ঋতুপর্ণা। ১৯৯০ সালে শিশির মজুমদারের শেষ চিঠি ছবিতে কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। এই ছবিতে অভিনয় করাকালীন ডাক আসে প্রভাত রায়ের শ্বেতপাথরের থালা (১৯৯২) ছবিতে অভিনয় করার। তিনি তখন আধুনিক ইতিহাসে স্পেশালাইজেশনসহ এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এই ছবির বিপুল সাফল্যের পরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৯৪ সালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে নাগপঞ্চমী ও চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর বিপরীতে লাল পান বিবি ছবিতে অভিনয় করেন ঋতুপর্ণা। কুশল চক্রবর্তীর বিপরীতে শেষ চিঠি ছবিটিও সেই বছরেই মুক্তি পায়। সুজন সখী, নাগপঞ্চমী, মনের মানুষ ও সংসার সংগ্রাম প্রভৃতি তার প্রথম দিকের ছবিগুলি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মুম্বাইতে তিনি হেমা মালিনীর সঙ্গে মোহিনী নামে একটি টেলিফিল্মও করেন। এছাড়াও তিসরা কৌন (১৯৯৪) নামে অপর এক হিন্দি ছবিতেও তিনি নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।
ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন (১৯৯৭), উৎসব (২০০০), অপর্ণা সেনের পারমিতার একদিন (২০০০) ও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২) ছবিতে তার অভিনয় বিদগ্ধ মহলের প্রশংসা অর্জন করে। দহন ছবিতে ধর্ষণের শিকার এক নববিবাহিতা রোমিতা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ১৯৯৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে অর্জন করেন জাতীয় পুরস্কার।
বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করে সেদেশেও সমান জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি লাভ করেছেন ঋতুপর্ণা। তবে সাগরিকা চলচ্চিত্রর জন্য ব্যাপক সমালোচনার মধ্য পরেন। এই চলচ্চিত্র জন্য সবাই তাকে অনেক খারাপ চোখে দেখে। তিনি ওড়িশি ও মণিপুরী নৃত্যে পারঙ্গমা। তার নিজের ভাবনা আজ ও কাল নামে একটি নাচের দলও আছে। এই দল রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, শ্যামা, মায়ার খেলা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য ও অন্যান্য আধুনিক ভাবনার নৃত্যানুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে খ্যাতিলাভ করেছে। এছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন প্রিজম এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও। আনন্দলোক ও বাংলাদেশের হৃদয় পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলামও লিখেছেন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন চলচ্চিত্রে পুনরায় প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণা জুটি বাঁধতে দেখা যায়।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ভারত নির্মাণ পুরস্কার (১৯৯৫), কলাকার পুরস্কার (১৯৯৬), উজালা আনন্দলোক শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (২০০০) সহ নানা পুরস্কার পান। আজ অভিনেত্রীর জন্মদিনে তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।