বাল্যবিয়ে-আত্মহত্যাকে ‘না’ বলে শপথ: অভিনন্দন শিক্ষার্থীরা
বর্তমানে সমাজের অস্থিতিশীলতা বেড়েই চলেছে। যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গে কুলিয়ে না উঠতে পেরে ঘটছে আত্মহত্যা। আবার কন্যাদের সঠিকভাবে মানুষ করে না তুলে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, নিরাপত্তা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অপব্যাখ্যা দিয়ে কন্যাদের প্রাপ্ত বয়সের আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
করোনাকালে বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যার ঘটনা বহুলাংশে বেড়ে গেছে। বিষয়টি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নারীদের জীবনে বাল্যবিবাহ হওয়ার অর্থ হলো নারীকে পঙ্গু করে ফেলা। কারণ বাল্যবিয়ের দরুণ নানামাত্রিক শারীরিক, মানসিক জটিলতায় পড়তে পারে নারী। পূর্বোক্ত পরিসংখ্যান বা গবেষণাগুলো বাল্যবিয়ের ফলে নারীদের দীর্ঘমেয়াদি নানাবিধ অসুখের উল্লেখ পাওয়া যায়। যার ফলে নারীর স্বাভাবিক জীবন রোহিত হয়। তবে পরিবার, সমাজের সচেতনতার মাধ্যমে বাল্যবিয়ে, আত্মহত্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা একটা সময় বয়ঃসন্ধি কাল পার করে। তখন তাদের আবেগ বেশি থাকে। অল্পতেই ভেঙে পড়ে। মনোবল জোগানোর মতো বা ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অসীম সাহস তাদের থাকে না। ফলে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই মৃত্যুকে একমাত্র মুক্তি ভেবে নেয়। আবার বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে নারীরা নানাবিধ জটিলতায় পড়বে স্বাভাবিক। তাই বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। তার জন্য চায় সচেতনতা বৃদ্ধি। সেই কাজটিই করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুস্বর্গ ও নগদ। তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভূয়সী প্রশংসার দাবি রাখে। পরিবার, সমাজের এই অস্থিতিশীলতা কমাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে তার সুফল বেশি হবে নিশ্চিত অর্থেই।
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যাকে ‘না’ বলে লাল কার্ড দেখিয়ে শপথ করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সাতশ শিক্ষার্থী। এই সময় শিক্ষার্থীদের নগদের সৌজন্যে পিরিয়ড বিষয়ক স্বাস্থ্য সচেতনতায় বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাডও বিতরণ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে। তেমনই তারা বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছে। আর জীবনের সংকটগুলো মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ব্রত গ্রহণ করেছে। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এমন শপথ গ্রহণ নিঃসন্দেহে তাদের ভালো পথের সন্ধান দেবে।
বাল্যবিয়ের ফলে বেশিরভাগ নারীই পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েন। আর শিক্ষা থেকে দূরে যাওয়ার অর্থ নারীর স্বাবলম্বী না হওয়া। এর ফলে নারীকে স্বামী বা পরিবারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভশীল হয়ে পড়া। যদি পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তবে নারীরা চুপ করে সব সহ্য করেন। নিজের বলতে নারীর সঞ্চিত কিছু থাকে না আর। শুধু পারিবারিক সমস্যায়ই নয় বরং শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তান জন্মদানে শিশুর এবং মায়ের দুজনের ওপরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পঞ্চগড়ের এই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা এবং বাল্যবিবাহকে ‘না’ বলে শপথ গ্রহণ করেছেন।
নারীদের সচেতন করতে, তাদের জীবন সম্পর্কে বোধগম্যতা বাড়াতে স্কুল-কলেজে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনসচেতনতামূলক নাটিকা, স্কেচ, পোস্টার, অভিজ্ঞ ডাক্তারের সরাসরি পরামর্শ বিষয়ক সেমিনার করার মাধ্যমে নারীদের সচেতন করতে হবে।