অন্তঃসত্ত্বার শরীরেও সিসা: পরিবারকে সচেতন হতে হবে
প্রতিনিয়তই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। দেশের অভ্যন্তরে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে শরীরে সিসার উপস্থিতি! জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর ), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি সম্প্রতি এক গবেষণা চালিয়েছে। এই গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ফোরক এক তথ্য! দেশের সাড়ে তিন কোটি শিশুর শরীরে সিসার উপস্থিতি রয়েছে।
বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরে সিসার প্রভাব বেশি। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে ইউনিসেফ জানিয়েছে, দেশের ৪ টি জেলায় শিশুদের রক্তে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট এই চার জেলায় শিশুদের দেহে সিসার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে সিসার পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়ে শিশুর শরীরে সিসার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। ২৪ -৪৮ মাস বয়সী শতভাগ শিশুর শরীরেই সিসার উপস্থিতি রয়েছে। আইসিডিডিআরবির করা গবেষণা তথ্য অনুযায়ী ঢাকার ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এবং শতভাগ শিশুর শরীরে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এই প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তার ফলে বর্তমানে শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
শুধু তাই নয় অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরেও সিসার উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সিসা দূষিত হলুদের গুঁড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ! গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষা করে ৩০শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর দেহে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউনিসেফের গবেষণায় জানানো হয়, বাজারে বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করে ৩৬৭টির মধ্যে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল, সবজি, চাল ও মসলার নমুনায় সিসা শনাক্ত হয়েছে। শহর চারটি হলো ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এ ছাড়া মাটি, ছাই, পোড়া মাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
মায়ের শরীরে সিসার উপস্থিতি থাকলে পরবর্তীতে সন্তানের শরীরেও প্রবাহিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এর ফলে সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশ রোহিত হবে। শৈশবে সিসার প্রভাব শিশুর বুদ্ধিমত্তা কমায়, মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে, লেখাপড়ায় দুর্বল করে তোলে। মায়ের শরীরে সিসার উপস্থিতি থাকলে দ্রূত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করেই খাবার গ্রহণ করতে হবে। ফাইবার যুক্ত মোটা লাল চাল, ফল ও সবজি যথাসম্ভব পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিয়ে খেতে হবে।
শরীরে সিসার উপস্থিতি কমাতে হলে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। অবৈধ ব্যাটারি উৎপাদন ও পুনব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। কারণ সিসা একটি নীরব ঘাতক। ধীরে ধীরে শরীরে আরও সমস্যা বৃদ্ধিতে সিসা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আর অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এ ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক দিকনির্দেশনা মেনেই এসময়টা পার করা উচিত নারীদের।