আজ শেখ রাসেলের ৫৯ তম জন্মদিন
শেখ রাসেল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৯৬৪ সালের আজকের দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৫৯ তম জন্মবার্ষিকী।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের বুলেটের আঘাত থেকে রক্ষা পায় নি। ঘাতক চক্র তাকেও হত্যা করেছিল নির্মমভাবে। শেখ রাসেল ছিলেন শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই দিবসের এবারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক, দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক’।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ১১ বছরের শিশু রাসেল প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘুমিয়েছিল। আকস্মিক গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমভাঙা চোখে সে আতঙ্কিত হয়ে চমকে ওঠে। অবস্থা বুঝে বেগম মুজিব আদরের দুলাল রাসেলকে রক্ষায় বাড়ির কাজের লোকজনসহ পেছনের দরজা দিয়ে চলে যেতে বলেন। পেছনের ফটক দিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় ঘাতকরা রাসেলকে আটক করে। এ সময় বাড়ির ভেতরে মুহুর্মুহু বুলেটের শব্দ, বীভৎসতা আর আর্তচিৎকার শুনে অবুঝ শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘাতকদের বলেছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ পরে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জোর মিনতি করে বলেছিল, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর আকুতিও নরপশুদের মন গলাতে পারেনি। মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে এই প্রতিভাবান শিশুর জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল ঘাতকরা সেকারণেই আত্মীয়স্বজন সহ পরিবারের সব সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, রক্ষা পায় নি শিশু রাসেলও।
ছোট্ট রাসেল হয়ে গেলেন শহিদ। শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এটি বাংলাদেশের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারিতে “শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ” এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের মাধ্যমে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। সংগঠনটির উদ্বোধন করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাসেল ছিল সবার ছোট, অনেক আদরের। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারে। এজন্য শিশু রাসেল পিতার সান্নিধ্য ও আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো জাতির নেতৃত্ব দিত, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করত। কিন্তু বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য, ঘাতকেরা ছোট্ট রাসেলকেও সেদিন রেহাই দেয়নি। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। রাসেল আজ বিশ্বে অধিকারবঞ্চিত শিশুদের প্রতীক ও মানবিক সত্তা হিসেবে বেঁচে আছে সবার মাঝে। রাষ্ট্রপতি শহিদ শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো—হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত মুখ। যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথাভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা। এই কোমলমতি শিশু রাসেলকে আমরা হারিয়েছি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে। সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনো গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি। রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে আজ হয়তো মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত। প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।