কন্যাশিশুর নিরাপত্তায় যা বললেন তারা
কন্যাশিশুর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া আজ সময়ের দাবি। কিন্তু সে দাবি কতটা পূরণ হচ্ছে, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সচেতন মহল থেকে। একইসঙ্গে তারা কন্যাশিশুর অধিকার, নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তাদের জীবনকে নির্বিঘ্ন করতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোছা. শামীমা খাতুন বলেন, ‘কন্যাশিশু শব্দটির সঙ্গে সঙ্গেই যে কথাটি মাথায় আসে, তা হলো নিরাপত্তা। কোর্টে কাজ করার সুবাদে যেটা দেখেছি , ধর্ষণ, অপহরণ, ইভটিজিংয়ের শিকার বেশিরভাগ ভিকটিমই হচ্ছে কন্যাশিশু। ভাবতে হচ্ছে, তাহলে আমাদের কন্যাশিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ কেমন? আমরা যাদের আপন ভাবি, অর্থাৎ নিকট আত্মীয়, সাহায্যকারী, শিক্ষক এমনকি তারা একজন নারীও হতে পারেন, যার কাছ থেকে আপনার কন্যাশিশু যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। এ সমস্যাগুলো প্রায় ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে। নারীরা দিনে দিনে যত কর্মমুখী হচ্ছে, তত এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ থেকে নিরাপদে থাকার উপায় আসলে তাহলে কী? আমার প্রথমেই যেটা মনে হয়, সেটা হলো, আপনার সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাটা জরুরি। যেন সে যেকোনো বিষয় বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। কন্যা সন্তানকে তার শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, নিরাপদ ও অনিরাপদ স্পর্শ সম্পর্কে জানানো জরুরি।’
এই বিচারক আরও বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিকতাবোধ, মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। কন্যাশিশুকে একা কারও কাছে না ছাড়া এবং যতদূর সম্ভব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা-নেওয়া বাবা-মাকে করতে হবে। সর্বাোপরি আপনার সন্তানকে শুনতে হবে অর্থাৎ তার কথাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আসলে বাচ্চাকে তো আর সবসময় চোখে চোখে রাখা যায় না, কোনো না কোনোভাবে কারও উপর নির্ভরশীল হতেই হয়। এক্ষেত্রে আপনি কাকে বিকল্প ভাবছেন, সেটা সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন করতে হবে। কোনো কিছু ঘটার আগে সেটাকে প্রতিরোধ করাটাই বড় কথা।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘দেশে শুধু কন্যাশিশু নয়, ছেলে-মেয়ে কারোই বেড়ে ওঠার সুস্থ পরিবেশ এখন নেই। আমরা যখন স্কুল-কলেজে গিয়েছি, তখন বাবা-মাকে ভাবতে হয়নি। কারণ তখন সামাজিকতা বেশি ছিল। সহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা ,শ্রদ্ধাবোধ, নিরপত্তা, পারস্পারিক সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সহমর্মিতা ছিল। গোষ্ঠী-সম্প্রদায় , এলাকা ভেদে সবার মধ্যেই একটা আত্মিক বন্ধন ছিল। স্কুল-কলেজে গেলে বাবা-মা সন্তানের বাড়িফেরা নিয়ে অযথা দুশ্চিতা করতে হতো না। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাবা-মাকে সর্বদা সন্তানের জন্য উদগ্রীব থাকতে হয়। বাসায় কতদূর পর্যন্ত মানুষ আসতে দেওয়া উচিত সে সম্পর্কেও তাদের ভাবতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে নিকট আত্মীয়, ভাই, পড়া-প্রতিবেশীর কাছে সন্তানকে নির্দ্বিধায় রেখে গ্রামের মায়েরা আনেক ক্ষেত্রেই তাদের কাজ গুছিয়ে নিতেন। কিন্তু এখন এ ধরনের কোনো কিছু কল্পনাও করা ভয়াবহ ‘
দিলরুবা শরমিন বলেন, ‘আমাদের সময় আমরা দল বেঁধে মৌলবির কাছে পড়তে যেতাম। কিন্তু আজ সেখানেও নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের শিশুরা। এর অর্থ আজকাল সব সেক্টরেই ভয় কাজ করছে। ঘরের ভেতরে বা বাইরে কোথাও কন্যাশিশুর সঠিকভাবে, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আগে পুরুষ নারী নির্বশেষে সব শিক্ষককে গুরু মেনেই তার দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করতাম। কিন্তু এখন সবদিকে গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। স্কুলে-কলেজে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সিঁটিয়ে থাকে । তারা খেলাধুলা থেকে সবদিকেই নিজেদের নিবৃত্ত রাখে। বরং তারা বাধ্য হয়। নারী ফুটবলাররা দেশের মুখ উজ্জ্বর করলো কিন্তু সামাজ, রাষ্ট্র তাদের কতটা মূল্যায়ন করা হলো? কন্যাশিশুদের বেড়ে ওঠার সুস্থ পরিবেশ এখন নেই। কন্যাশিশু হোক আর তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক নারী হন কারও জন্যই আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘কন্যাশিশুদের স্বাভাবিক পরিবেশ দিতে পরিবারকেই প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। কন্যাশিশুর বেড়ে ওঠাকে কেন্দ্র করে আমরা তার মগজে ঢুকিয়ে দেয় রূপচর্চা, সেলাই কাজ, রান্না-বান্নার কাজ। কন্যা হয়ে জন্মালেই এটাই যেন তার স্বাভাবিক কাজ! এগুলো বুঝিয়ে এটাই মনে গেঁথে দেওয়া হয়, তোমার ভালো বর পেতে হলে এই কাজগুলো করতে হবে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক করে তোলার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয় না। কন্যাশিশুদের নিরাপদে গড়ে তুলতে হলে রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। স্কুল -কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরিবারগুলোকেও কন্যাশিশুদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। কন্যাশিশুরা আগামীদিনের দেশ বিনির্মাণের কর্ণধার ফলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে জাতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’
লেখক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে আপন গুণ,মেধা,শক্তি, প্রত্যয় ও ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলাররা সাফ ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরলো এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন বাড়ছে এর পাশাপাশি বাড়ছে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন এবং তার সঙ্গে দিন দিন তার চারপাশের পরিবেশও হয়ে উঠছে প্রতিকূল।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ এমন হয়ে গেছে যে একটা মেয়ে শিশুকে খুব সাবধানে বড় করতে হচ্ছে। একটা কন্যাশিশু এদেশে কোথাও সেফ নয়। জন্মের পর থেকে প্রতি পদে পদে তাকে অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। হয়তো সে মলেস্ট হচ্ছে খুব কাছের মানুষ দ্বারা। একজন আইনজীবী হিসেবে এই বিষয় নিয়ে অনেক বাজে ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে আমাকে। ’
এই আইনজীবী বলেন, ‘এমন অনেক মামলাও হয়েছে যেখানে মেয়ে বাবার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদেশের মেয়ে বা কন্যা শিশুরা কোথাও তাদের নিরাপত্তা দাবি করতে পারে না। চলন্ত বাসে ঘটছে ধষণ, ফাঁকা রাস্তায় ইভটিজিং হচ্ছে, অপহরণ হচ্ছে। কোথাও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি আজও।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর আদি থেকেই নারী লড়াকু,যোদ্ধা। তার চারপাশে যা ই ঘটুক সে এগিয়ে যাবেই। কিন্তু আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে যা দিয়ে আমরা তাদের চারপাশের পরিবেশকে সুন্দর ও সুস্থ করে দেয়া যায়। প্রথমেই আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণ বদলাতে হবে। ছোটবেলা থেকেই একজন কন্যা সন্তানকে সকল বেড়াজাল ছিন্ন করতে সহযোগিতা করতে হবে,তাকে শুধু কন্যা সন্তান নয় মানুষ হিসেবে দেখতে হবে।’
শেখ কানিজ ফাতেমা
শেখ কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের মানবিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে, সামাজিক,সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবারের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি কন্যা সন্তানকে একটা সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ দিতে পারি।’
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ইসরাত জাহান দিপা বলেন, ‘‘প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। এই শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যা শিশু দিবস হিসেবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘সময়ের অঙ্গীকার, কন্যাশিশুর অধিকার।’ ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর ১১ অক্টোবর দিবসটি খুব গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো, ১.লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, ২.শিক্ষার অধিকার, ৩.পরিপুষ্টি, ৪.আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, ৫.চিকিৎসা সুবিধা, ৬.বৈষম্য থেকে সুরক্ষা এবং ৭.কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে হিংসা ও বল পূর্বক তথা বাল্যবিবাহ বন্ধকরণ।’’
ইসরাত জাহান বলেন, ‘আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শিশুদের মধ্যে অন্তত ১৫ শতাংশ কন্যাশিশু। কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকেই একটি ঘর আলোকিত হতে শুরু করে। যেকোনো পিতামাতার জন্যই কন্যা সন্তান আশীর্বাদ। কিন্তু সকল স্তরের পিতামাতার কাছেই কন্যাশিশু আশীর্বাদ নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হতদরিদ্র পরিবারে কন্যাশিশু জন্মের পর থেকেই অভিশাপ হিসেবে বেড়ে উঠছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এবং শহরের বস্তি এলাকায় কন্যাশিশু জন্মের পর থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আবার কখনো কখনো শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারেও কন্যাশিশু অবহেলিত ভাবে বেড়ে উঠছে।’
এই ব্যাংকার বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারে যেখানে দুবেলা দুমুঠো আহারের ব্যবস্থা অনিশ্চিত, প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেখানে নিত্যসঙ্গী, সেখানে কন্যাশিশুর অধিকার, স্বাস্হ্যসেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা বরং কন্যাশিশুকে ৭-৮ বছর হলেই বাসার কাজে, কল কারখানা, গার্মেন্টস ইত্যাদিতে কাজে লাগিয়ে তার থেকে উপার্জন আশা করে। অনেক সময় দেখা যায়, কন্যাশিশুর ভাই লেখাপড়া করছে, অথচ কন্যাকে সংসারে আয়ের পথ বেছে নিতে হয়েছে। একটি শিশু জন্মের পর যে সব অধিকার নিয়ে জন্মায় তার প্রায় সবগুলো থেকেই কন্যাশিশুরা বঞ্চিত। শারীরিক ও মানসিকভাবে সঠিকরূপে বিকশিত হতে পারছে না। আমাদের সমাজ এখনো অনেক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। কন্যাকে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিতে কন্যা শিশুর উপর বল প্রয়োগ করা হচ্ছে।’
ইসরাত জাহান, ‘এভাবে শিশু অবস্থায় বিয়ে দিয়ে প্রথমত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এবং পরে নানারকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশুরা। এছাড়া, গত দুবছরে করোনার সময়ে কন্যাশিশুদের ঘরের ভেতরে-বাইরে নির্যাতন তথা ধর্ষণ, যৌন-নিপীড়নের হার বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। যে বয়সে স্কুলে যাবে, সে বয়সে তারা শিশুশ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে। নানারকম অপরাধ কর্মকাণ্ডসহ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে কন্যাশিশুদের জীবন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে কন্যাশিশুদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। পরিবার থেকেই কন্যাশিশুর প্রতি যথাযথ যত্নশীল হতে হবে। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ তাই সব শিশুর প্রতি সদাচারণ করতে হবে। শিশু অধিকার রক্ষায় যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সরকারি বা বেসরকারিভাবে সেখানে প্রত্যেক কন্যাশিশুকেও সমানভাবে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পারিবারিকভাবে বৈষম্য দূর করতে হবে। প্রত্যেক কমিউনিটিতে কন্যাশিশুর অধিকার রক্ষায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু আইনের প্রয়োগ জোরালো হতে হবে। অবশ্য সেই পূর্বের নিপীড়ন-নির্যাতন দিনে দিনে ক্রমশ কমে আসছে, কন্যারা প্রতিবন্ধকতা দূর করে শিক্ষা, খেলাধুলা,ব্যাবসায় সবকিছুতেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
এই ব্যাংকার বলেন, ‘একটি সুস্থ দক্ষ নাগরিকসম্পন্ন জাতি পেতে হলে কন্যাশিশুদের অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ছেলেশিশুর পাশাপাশি কন্যাশিশুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত হোক। এগিয়ে যাক দেশ, এগিয়ে যাক গোটা পৃথিবী।’