৩ রানে হারলো বাংলাদেশ
নারী এশিয়া কাপের সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে আজকের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। তবে বৃষ্টির কারণে কার্টেল ওভারের ম্যাচে ৭ ওভারে ৪১ রানের টার্গেট পেয়েও ৩ রানে হেরে গেলো নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ১৯তম বৃষ্টির জন্য থেমে যায় মাঠের খেলা। স্কোরবোর্ডে শ্রীলঙ্কার রান তখন ৫ উইকেটে ৮৩। পরে বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত ২০ ওভার পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি আইনে ৭ ওভারে জয়ের জন্য ৪১ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে জয়ের উদ্দেশ্যে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো জ্যোতি বাহিনী। পাকিস্তান আর ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনাল নিয়েই শঙ্কায় পড়ে যাওয়া নারী এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ছিলো এই ম্যাচ। তবে এই ম্যাচেও হেরে এখন এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে উঠতে না পারার শঙ্কায় পড়ে গেলো বাংলাদেশ।
টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান টাইগ্রেস অধিনায়ক জ্যোতি। দ্বিতীয় ওভারেই তার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করেন পেসার জাহানারা আলম। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আথাপাথুকে বোল্ড করে ১ রানেই ফিরিয়ে দেন জাহানারা। দলীয় ৬ রানেরি প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
তিন নাম্বারে নামা আনুশকা সঞ্জীওয়ানিকে সঙ্গে নিয়ে আরেক ওপেনার হর্ষিতা মাদাভি প্রতিরোধ গড়ে তুললেও খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি। অষ্টম ওভারের শেষ বলে দুজনের ২৫ রানের জুটি ভেঙ্গে দলীয় ৩১ রানের মাথায় হর্ষিতাকে ফেরান সানজিদা মেঘলা। ফেরার আগে লঙ্কান ওপেনার করেন ৩১ বলে ১৮ রান।
পরের ওভারের প্রথম বলেই আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন রুমানা আহমেদ। আনুশককে ফেরান ৮ রানে। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে চফাপে পরে যায় শ্রীলঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে সেই চাপ সামাল দেন হাসিনি পেরেরা আর নীলাক্ষী ডি সিলভা। দুজন মিলে গড়েন ২৯ রানের জুটি। দলীয় ৬০ রানের মাথায় হাসিনিকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে আরেকবার ধাক্কা দেন ফাহিমা খাতুন। সাজঘরে ফেরার আগে হাসিনি করেন ১৭ বলে ১১ রান।
পঞ্চম উইকেটে কবিশা দিলহারিকে সঙ্গে নিয়েও ১৭ রানের জুটি গড়েন নীলাক্ষী। ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে দলের ৭৭ রানের মাথায় কবিশাকে ফেরান রুমানা।
বাংলাদেশের বোলারদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান এক নীলাক্ষী। ১৯তম ওভারে হঠাৎই সিলেটের আকাশজুড়ে নেমে আসে বৃষ্টি। বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৩১ বলে ২৮ রান নিয়ে ক্রিজে ছিলেন নীলাক্ষী। ২ বলে ১ রান তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওশাদি রানাসিংহে।
বৃষ্টি থামতে দেরি হওয়ায় পরে আর ব্যাটিংয়েই নামা হয়নি শ্রীলঙ্কার। ডার্ক-ওয়াথ লুইস মেথডে ৭ ওভারে ৪১ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছে বাংলাদেশ।
অল্প রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা অবশ্য একেবারেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ৪ রানেই ফিরে যান ওপেনার মুরশিদা খাতুন। তৃতীয় ওভারে দলীয় ১২ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার ফারজানা হকও। ফারজানা ফিরে যান ৬ রানে।
রুমানা আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক নিগার সুলতানা এক প্রান্তে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। ইনোকা রানাবীরার করা পঞ্চম ওভারেই বাংলাশের জয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়ে তাসের ঘরের মতো। এক ওভারেই বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট। দলের ২৭ রানের মাথায় নীলাক্ষীর হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রুমানা। ফেরার আগে করেন ৯ বলে ৮ রান।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় দুই বল পরেই জ্যোতি আউট হয়ে গেলে। ১১ বলে ১২ রান করে লঙ্কান উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়েন টাইগ্রেস কাপ্তান। আবারও দুই বল পরেই বাংলাদেশের আরেক উইকেটের পতন। সোবহানা মোস্তারি ফেরেন মাত্র ১ রান করেই। ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে ফেরেন ফাহিমা।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ১১ রানের। প্রথম ৪ বল থেকে ৪ রান তোলেন রিতু মনি আর সালমা খাতুন মিলে। পঞ্চম বলে ২ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সালমা। পরে একটি ওয়াইডসহ শেষ বলে রিতু ১ রান নিলে নির্ধারিত ৭ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ৩ রানে হেরে গিয়ে এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে ওঠাটাই এখন অনিশ্চিত হয়ে গেলো বাংলাদেশের জন্য। সেমিতে উঠতে হলে শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতের বিপক্ষে বড় জয়ের পাশাপাশি অন্যদের রানরেটের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে জ্যোতিদের।
অনন্যা/এআই