আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবদান
‘এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?’
বয়স কুড়ি থেকে সত্তর বছর, অথচ এই গান পছন্দ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বিখ্যাত গানটিতে সুচিত্রা সেন ঠোঁট মিলিয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নরেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মা হেমপ্রভা দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সব চেয়ে ছোট ছিলেন তিনি।
কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে জয় করেছেন বাঙালির হৃদয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, সিনেমার প্লেব্যাক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত ও পুরাতনী গানেও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।
তাঁর প্রথম সঙ্গীত-শিক্ষক ছিলেন তাঁরই বাবা। তাঁর বয়স যখন ১৪ বছর, সেই সময়ে ‘গীতশ্রী’ নামে একটি গানের পরীক্ষা হতো। সেই পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় তাঁর নামের সামনে ‘গীতশ্রী’ পদবি যুক্ত হয়ে তাঁর নাম হয় গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এর পরই বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্যগান শুরু করেছিলেন তিনি।
আধুনিক গানে মাইল ফলক ছোঁয়া তাঁর গাওয়া কিছু গান হলো: ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার’ বা ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রেখেছেন এই সঙ্গীত-কিংবদন্তি। ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সাথে যোগ দেন গণ-আন্দোলনে এবং যুদ্ধ চলাকালে যারা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহও করেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গানও রেকর্ড করা হয়েছিল তাঁর কণ্ঠে । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দি হওয়ার সময় গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটিও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। স্বাধীনতার পর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পল্টন ময়দানে আয়োজিত উন্মুক্ত কনসার্ট অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি শিল্পী।
নিজের কণ্ঠে সবার মনে জায়গা করে নেওয়া এই কিংবদন্তি গায়িকা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে প্রয়াত হন।