ফুঁসছে ইরান, জাগুক নিখিল নারীরা
বর্তমানে বিশ্ব তোলপাড় নারীর পোশাককে কেন্দ্র করে। পোশাকের স্বাধীনতা হরণ করে নারীর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে আন্দোলন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে পোশাককে কেন্দ্র করে যে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল তেমনই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান। তবে আমাদের দেশের নারীরা তাদের নিজ অবস্থানের কারণে শোষণ কিছুটা স্তিমিত। তবে বৃহৎ অংশের মানসিকতা এখনো নিম্নগামী। দেশে হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণের জন্য নারীকে দোষারোপ করে নিজেরা দায় মুক্ত হয় পুরুষতন্ত্র। কিন্তু আবহমানকাল ধরে নারীকে বারবার কেন পোশাকের জন্য অবরুদ্ধ করার পায়তারা শোষক শ্রেণির?
বর্তমানে ইরান ফুঁসে উঠেছে, নারীর মাথায় পরিহিত হিজাবকে কেন্দ্র করে। সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে আটক এক নারীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে ইরানের নারীরা৷ ২৩ সেপ্টেম্বর এক বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে ইরানজুড়ে। নারীরা তাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কোনো শোষকরূপী মানুষ তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর পোশাক পরিধান সম্পর্কে বিধিনিষেধ দিতেই পারে না। নারীরা চুল কেটে, হিজাব পুড়িয়ে, পথ নাটক, বুকে পোস্টার করে রাস্তায় নেমেছেন। তাদের দাবি জীবনের ওপর থেকে বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়া। মাহশা আমিনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার হওয়া।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ২২ সেপ্টেম্বর ইরানের ‘নীতি পুলিশের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে রাজধানী তেহরানে আসেন। ‘অসভ্য’ পোশাক পরার অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশ মাহশাকে আটক করে। পরে পুলিশ হেফাজতেই এই নারীর মৃত্যু হয়। এবং ইরানের কর্তৃপক্ষ দাবি করে, আটককেন্দ্রে অবস্থানের সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন।যার কারণেই তিনি মারা যান। ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর পর ইরানের সাধারণ নাগরিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে এবং এই হত্যার বিচার দাবি করেন।
স্বাধীনতার জন্য সবসময়ই যুদ্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। নারীদের অবরুদ্ধ দশাকে কাটিয়ে উঠতেও যুদ্ধের অবতারণা করতে হবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
শোষণ সবসময়ই নারীকে ঘিরে। আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় নারীরা শোষিত বেশি ইসলামি শাসন যেই রাষ্ট্রগুলোতে। কিন্তু একটি বিষয় গভীরভাবে চিন্তার বিষয় এই রাষ্ট্র নেতা বা নাগরিকেরা কিন্তু ইসলামের শাসন চালাচ্ছেন তবে কেন নারীরা শোষিত? কারণ শান্তির ধর্ম ইসলাম। তবে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কেন? নারীর জন্য সঠিক নির্দেশ যদি কেউ দেন তবে ধর্মেই তার বিধান থাকবে আর ধর্ম পালনও প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব বুদ্ধি, বিবেচনা, স্বাধীনতা।
ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখা কেন? পুরুষতন্ত্র নিজেদের খেয়ালখুশি মতো নারীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। শুধু হিজাব পরার জন্য একজন নারীর মৃত্যু এটা কোন বিধান? নারী বলেই তার ওপর আরোপিত হবে শোষণের স্ট্রিম রুলার? আর সমাজের সব পুরুষের দায় শুধু নিজেদের হম্বিতম্বি দেখানো? ইরানি নারীদের মতো সবখানে গড়ে উঠুক নারীর প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ।
ইরানের ঘটনা শুধু যে ইরানের মধ্যে সীমাবদ্ধ বা নারীরা সেখানে শোষিত বিষয়টি এমন নয়। সারাবিশ্বে শোষিত নারী। মৌলবাদী রাষ্ট্রগুলো শোষণের নতুন মাত্রা পেয়েছে নারীর পোশাককে কেন্দ্র করে! তবে ইরানি নারীরা যেভাবে ফুঁসে উঠেছে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে আবারও বিশ্বময় নারীরা একজোট হয়ে বিপ্লব করবে। সংহতি জানাতে পাশে দাঁড়াবে সব নারী। স্বাধীনতার জন্য সবসময়ই যুদ্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। নারীদের অবরুদ্ধ দশাকে কাটিয়ে উঠতেও যুদ্ধের অবতারণা করতে হবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে।