বাংলার ঐতিহ্য ও আভিজাত্য নিয়ে ‘দ্য মসলিনে’র এক বছর
‘দ্য মসলিন’ নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এর সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্য, আভিজাত্য কতটা যুক্ত। এবার চোখের দেখায় মিলিয়ে নিতে হলে ঢুকতে হবে ‘লে মেরিডিয়ান ‘-এর লবিতে ‘দ্য মসলিনের’ আউটলেটে। ঢুকতেই সরাসরি চোখ পড়বে কাপড় বোনার একটি তাঁতের দিকে। তাঁতি বসে বসে কাপড় বুনছেন, এমন দৃশ্যও চোখে পড়তে পারে।
প্রথম দেখায় মনে হবে, ইট পাথরে ঘেরা এত উঁচু দালানের মধ্যে এ নিশ্চয়ই শখের বসে সাজিয়ে রাখা একটি তাঁত মাত্র। তবে অবাক হবেন তখনই, যখন আপনার ভুল ভাঙবে। এটি শখের বশে সাজিয়ে রাখা হয়নি। বরং এখানে বসে কাপড় বুনতে থাকেন তাঁতি। এখানে যেমন রয়েছে চোখ ধাঁধানো সব কালেকশন, তার ওপর আবার সুযোগ রয়েছে নিজের ইচ্ছে মতো কাস্টমাইজ করার।
বেশ কিছুদিন আগে রোমানিয়ার জনপ্রিয় পপ গায়িকা ওটিলিয়া ব্রুমা বাংলাদেশে আসেন। তার শাড়ি পরা ছবিতে মুগ্ধ হয় নেটিজেনরা। লাল টুকটুকে সেই শাড়িটি তিনি নিয়েছেন দ্য মসলিন থেকেই। নিজের জন্য নিয়েছেন লাল রঙের মসলিন আর মায়ের জন্য কালো জামদানি। দি মসলিনের আউটলেট ঘুরে শাড়ি দুটি পছন্দ করেন ওটিলিয়া।
‘দ্য মসলিন’ এর আউটলেটে তাদের অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতো। এমন ভিন্নধর্মী, আকর্ষণীয় উদ্যোগের যাত্রা আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে তাসনুভা ইসলামের হাত ধরে। ‘দ্য মসলিন’-এর ফাউন্ডার,ডিরেক্টর ও সিইও তিনি। মসলিনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং দেশীয় কাপড়, গহনা, কারুশিল্প পণ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতেই ‘মসলিন’-এর যাত্রা। দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড, প্রান্তিক তাঁতিদের নকশা ও তাসনুভা ইসলামের নিজস্ব কিছু নকশা নিয়ে শুরু হয় মসলিনের যাত্রা।
তাসনুভা ইসলাম পড়াশোনা করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং এ তবে ছোটবেলা থেকে আর্ট, ক্রাফটে তার বেশ আগ্রহ ছিল। হলি ক্রস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর দেশের বাইরে যান উচ্চশিক্ষার জন্য৷ সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে দেশে ফিরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। নতুন কিছুর উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা মাথায় আসে ২০২০-এর করোনার সময়ে।
তখন বিশ্বজুড়ে কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেন আরও চাঙা হয়ে উঠেছিল। অনলাইনে কেনাকাটার হার বাড়ছিলো। জামদানি, মনিপুরীর মতো দেশীয় পোশাক চোখে পড়ছিল খুব। অনেকেই শুরু করেছিলেন নতুন নতুন উদ্যোগ। সেখান থেকেই ইচ্ছে আরও দৃঢ় হয় তাসনুভা ইসলামের। দেশীয় ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ইচ্ছা।
শুধু দেশীয় পণ্য নিয়ে দি মসলিনের যাত্রা শুরু হয় ২০২১ এর ১৫ সেপ্টেম্বর। সরাসরি তাঁতিদের থেকে পণ্য নিয়ে শোরুমে রাখেন তারা। হারিয়ে যাওয়া সেই মসলিনের ছোঁয়া, দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া রয়েছে দ্য মসলিনের পণ্যে। শাড়ি, জুতা, গয়না, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবই পাবেন এখানে। তাসনুভা ইসলাম বিদেশি পণ্যে নয়, ভরসা রাখতে চান দেশি পণ্যে।
এবার হার-ই-ট্রেডের এক্সিবিশনে যাচ্ছে দ্য মসলিন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ও ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে হওয়া হার – ই – ট্রেডের এক্সিবিশনে তোলা হবে দ্য মসলিনের পণ্য। তাসনুভা ইসলাম জানান, ভবিষ্যতে বাংলার ঐতিহ্য জামদানি ও মসলিন নিয়ে আরও বেশি কাজ করতে চান তিনি। বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে দ্য মসলিন।
অনন্যা/জেএজে