সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
বর্তমানে নারীরা পিছিয়ে নেই কোনো দিক থেকে। প্রায় প্রতিটি পেশায় এখন নারীদের দেখতে পাওয়া যায়। যতই চ্যালেঞ্জিং পেশা হোক না কেন, নারীরা আজ আর পিছিয়ে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় তারা রাজনীতিতেও নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন। ঘর সামলানোর পাশাপাশি দেশও সামলাতে পারেন নারীরা। এমনই একজন রাজনীতিবিদ হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রমিলা রাজনীতিবিদ ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন তিনি। এছাড়া আগে তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ ও মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। তিনি শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ে হয়।
১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৬৯- ১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২- ১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে টেকনোক্র্যাট কোটায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে, তিনি ফরিদপুর (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দশম ও একাদশ সাধারণ নির্বাচনেও তিনি এ জেলা থেকে নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি একই পদ অলংকৃত করেন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নিজের জীবনের দীর্ঘ সময় দিয়েছেন রাজনীতিতে। চেষ্টা করে গেছেন দেশের মানুষের জন্য কাজ করার। অকুতোভয় নারী নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বরাবরই নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন ও সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
অনন্যা/এসএএস