নারীর প্রতি নৃশংসতার শেষ কোথায়

নির্যাতন শব্দটি যুক্ত থাকলেও এর ধরন পাল্টায় বারবার। নারীর প্রতি সহিংসতা-নৃশংসতা দিনে-দিনে বেড়েই চলেছে। যত দ্রুত ভুক্তভোগী অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হচ্ছে, ততদ্রুত দ্রুত বিচার পাচ্ছে না। ভুক্তভোগীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘসময়। ফলে নিপীড়নকারী যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
নারীর প্রতি সহিংস আচরণের ফলে শাস্তির বিধান থাকলেও বাস্তবতায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে নানান গড়িমসি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করার আগে অপরাধীরা একবার হলেও ভাবতো। নারীর প্রতি নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা শুধু যে পুরুষ করে এমন নয়। বরং পুরুষের দোসর হিসেবে কিছু নারীও তার স্বজাতির প্রতি অত্যাচারী হয়ে ওঠে। হৃদয়ের কোণে কোথাও উঁকি দেয় না যে, নারী হয়ে আরেক নারীকে অত্যাচার-শোষণের পাঁয়তারা করা উচিত নয়। বিবেকে এতটুকুও দংশন হয় না নারী হয়ে অন্য নারীর প্রতি অবিচারের ভার নিজের হাতে নিতে।
বিষয়টির অবতারণা এ কারণে যে, গত ২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রেনু আক্তার (৩২) নামের এক নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যম সুবাদে যে ছবি সামনে এসেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী নারী ছাড়াও সেখানে অন্য নারীরও রয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রেনুর স্বামী শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রেনু আক্তার জানান, অভিযুক্তদের সঙ্গে তার পরিবারের পূর্ব শত্রুতা ছিল। বিকেলে তার স্বামী মুছা মিয়া পুকুরে মাছকে খাবার দিতে যান। এ সময় অভিযুক্তরা পূর্ব শত্রুতার জেরে তার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ঘটনাটি যদিও পারিবারিক শত্রুতার জেরে কিন্তু ভুক্তভোগী একজন নারীও। এমনকি নারীটির প্রতি শারীরিক অত্যাচারে ক্ষান্ত থাকেনি অভিযুক্তরা। বরং তাকে মারধোর করার মাধ্যমে ধরাশায়ী করতে চেষ্টা করা হয়েছে। আবার চুল কেটে আরেকটি অপরাধেরও জন্ম দিয়েছে।
করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংস আচরণকে রুখতে হলে আইনের শাসন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আর নারীদেরও সচেতন হতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ভুক্তভোগী নারীকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহোযোগিতাও জরুরি।
তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লোবনা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রেুনুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরবর্তী সময়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, নারী নির্যাতনের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। দ্রুত সময়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যান্ত্রিক জীবনে মানুষ প্রচণ্ড পরিমাণে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ছাড়া প্রীতির সম্মিলন যেন আজকাল সোনার হরিণের মতোই কল্পনা। নিপীড়ন-অত্যাচার-শোষণ বেড়ে উঠেছে প্রতিটি স্তরে। এর জন্য সমাজে নতুনভাবে জাগরণ সৃষ্টি করা দরকার। মানুষের মধ্যে মানবিকতা, মূল্যবোধ গড়ে তোলা দরকার। যেন এ ধরনের অপরাধগুলো কমে আসে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনা জরুরি। একইসঙ্গে পরিবারগুলো থেকে সন্তানদের ভালো-মন্দ বোঝাতে হবে। না হয় গ্রামীণ রাজনীতি থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা কিছুই কমানো সম্ভব হবে না।
এরসঙ্গে যুক্ত করতে হবে আইনের শাসন। আইনকে আরও নারীবান্ধব করে তুলতে হবে। আর বাস্তবায়ন সম্পর্কে নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। নারীরা যেন দ্রুত অবিচার-অত্যাচারের সমাধান পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংস আচরণকে রুখতে হলে আইনের শাসন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আর নারীদেরও সচেতন হতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ভুক্তভোগী নারীকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহোযোগিতাও জরুরি। বর্তমান ঘটনার ভুক্তভোগী নারী আইনের আশ্রয় চেয়ে মামলা করেছেন। আশা করি, তিনি দ্রুতই এ ধরনের পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার পাবেন।