কেমন আছে আফগান নারীরা
আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের একবছর পূর্ণ হলো। ঠিক এক বছর আগে যখন তালেবান ক্ষমতায় আসে, বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল আফগান নারীদের নিয়ে। তালেবানদের শাসনামলে আফগান নারীদের কি দশা হতে পারে তা মোটামুটি আঁচ করতে পারছিল বিশ্ববাসী। গতবছর ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই সবথেকে শঙ্কায় দেশ কাটাচ্ছেন দেশটির নারীরা। তালেবান সরকার গঠনের পর তাদের দেয়া নীতির কারণে বেহাল দশায় দিন কাটাতে হচ্ছে আফগান নারীদের।
তবে এ একবছরে ঠিক কী কী ঘটেছে, তাদের সঙ্গে, বর্তমানে আফগান নারীরা ঠিক কী অবস্থায় আছে, সে বিষয়ে চোখ দেয়া যাক।
নারীদের জন্য বন্ধ স্কুল
তালেবানের অতি-রক্ষণশীল শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুদের নির্দেশে বেশিরভাগ হাইস্কুলগুলো বন্ধ। অনেক মেধাবী কিশোরী ঘরবন্দি হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে তাদের দিন। সোহেলা নামের এক কিশোরীর কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী সোহেলা স্কুলে না যেতে পারার কথা প্রকাশ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার মতো অনেক কিশোরীই স্কুলে ফিরতে না পারার কষ্টে রয়েছে।
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷ ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্রণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে প্রাইমারির ওপরে মেয়েদের প্রায় সব স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান৷ এর ফলে মেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ কমে গেলো৷
নারীদের চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা
তালেবান শাসন শুরুর আগে দুই দশক ধরে আফগানিস্তানের যে আন্তর্জাতিক সংযোগ তৈরি হয়েছিল, তখন নারীরা শিক্ষা ও পেশাগত সুযোগ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। তালেবান শাসন শুরুর পরই সেই সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের বিদায় দেওয়া শুরু করে তালেবান সরকার। তালেবান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী নারীরা কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বেশ কয়েকজন আফগান নারীর কথা প্রকাশ করে। যারা দেশটির অর্থমন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তালেবান সরকার তাদের চাকরিচ্যুত করে। তাদের বলে, যেন তাদের পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে (বাবা, ভাই, স্বামী) তারা সিভি জমা দিতে বলেন। যদিও সেই নারীরা এ বিষয়ে একমত হতে পারছেন না। তাদের শিক্ষা ও যোগ্যতার বলেই তারা কাজটি পেয়েছিলেন, তবে কেন পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে তাদের স্থান দিয়ে দিতে হবে? যদিও তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি এসব কথা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি তাদের। কারণ, চারদিকেই ওঁৎপেতে আছে বিপদ।
তালেবান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কোনো পুরুষ আত্মীয় ব্যতীত একা গাড়িতেও উঠতে পারবেননা আফগান নারীরা৷ আফগান নারীরা যদি সড়কে বেশি দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চান, তাদের সাথে পুরুষ আত্মীয় থাকলে তবেই একমাত্র তাদের পরিবহন সেবা দেয়া হবে অন্যথায় তারা পরিবহন সেবা পাবেননা।
যদিও তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন নারীরা এখনো কাজ করছেন। তবে এখনো যারা কাজ করছেন তারা মূলত স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষা ও বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্মীর কাজে নিয়োজিত। এই পেশাগুলোতেই নারীদের বেশি দেখা যায়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে, যে নারীরা সরকারি চাকরি করতেন তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। তবে বেতনের পরিমাণও আগের তুলনায় অতি সামান্য।
নারীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
তালেবান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কোনো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া একা গাড়িতেও উঠতে পারবেন না আফগান নারীরা৷ তারা যদি সড়কে বেশি দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চান, তাদের সঙ্গে পুরুষ আত্মীয় থাকলে তবেই একমাত্র পরিবহন সেবা দেওয়া হবে। অন্যথায় তারা পরিবহন সেবাও পাবেন না।
নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো নারী যদি ৭২ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বে যেতে চান, তাহলে তার সঙ্গে কোনো পুরুষ আত্মীয় থাকতেই হবে। এছাড়া, তাদের নির্দেশিকায় বলা হয়, নারীরা হিজাব না পরলে তাদের ট্যাক্সিতে নেওয়া যাবে না।
টেলিভিশন নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ
আফগানিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নারী অভিনীত নাটক ও বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয় তালেবান সরকার। এ ছাড়া সংবাদ পাঠের সময় নারী সাংবাদিকদের হিজাব পরার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভেঙে দেওয়া হয়েছে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷ ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্রণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷
তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক নিজেদের জায়গা হারিয়েছেন আফগান নারীরা। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্মরত নারীদের বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর আগে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার অনুমোদন দেয়নি তালেবান সরকার। এবার এক বছরেই তালেবান সরকারের এতসব নিষেধাজ্ঞা নিকট ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে, তারই যেন আভাস দিচ্ছে।
অনন্যা/জেএজে