তাশিরোজিমায় বিড়ালের দ্বীপে একদিন
সাফারি পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানায় গিয়ে যাদের মন ভরে না, তারা ভ্রমণের জন্য আর কোথায় যেতে পারেন? খাঁচার আড়ালে থাকা প্রাণী দেখে মন কি আর ভরে? বরং ঘরের পোষা বিড়ালটিকে নিয়েই না হয় কিছুটা সময় কাটানো যাক। ও হ্যাঁ, জাপানেই তো বিড়ালের এক দ্বীপ আছে। চমকে উঠলেন? বিড়ালের দ্বীপ আবার কী?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। যেকোনো বিড়াল-প্রেমীদের জন্য স্বর্গভূমি জাপানের তাশিরোজিমা দ্বীপটি। এখানে প্রতিদিনই বহু পর্যটক ঘুরতে আসেন শুধু বিড়ালের সাথে সময় কাটাতে। হ্যাঁ, শুধু বিড়ালদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো।
জাপানের এই দ্বীপটি আহামরি কিছুই না। বরং গ্রামীণ এক বন্দর এলাকা। কিন্তু এই বিড়ালের স্বর্গরাজ্য বিড়ালকে ঘিরেই যেন গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক সংস্কৃতি। সারা পৃথিবী ঘুরেও এমন বৈচিত্র্য খুব বেশি চোখে পড়বে না। তবে ওশিকা উপদ্বীপের তীরবর্তী এই ক্ষুদ্রাকৃতির দ্বীপে দিনে একবারই আসা যাওয়া করা সম্ভব। একটি ট্রলারই দিনে আসা-যাওয়া করে দেড় বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটিতে। দূরে ট্রলার থেকেই দেখা যাবে বিড়ালের আনাগোনা।
তো, এত বিড়ালই বা কোথা থেকে এল? তার পেছনেও গল্প আছে। এককালে এই দ্বীপের বস্ত্রশিল্প বেশ বিখ্যাত ছিল। বস্ত্রশিল্প বা বলে কাপড় বুননের সুতোর জন্যেই খ্যাতি বেশি ছিল বলা চলে। স্থানীয়রা এক ধরনের শূককীট থেকে সুতো উৎপাদন করত। কিন্তু ইঁদুরের যন্ত্রণায় টেকা মুশকিল। শুধু সুতোই না, তাশিরোজিমা যেহেতু বন্দর এলাকা, জেলেদের জালও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। বিরাট যন্ত্রণা। স্থানীয় লোকেরা সিদ্ধান্ত নিল শহরে কেউ গেলে কয়েকটা বিড়াল ধরে আনবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
শহর থেকে বিড়াল এনে দ্বীপে ছেড়ে দেয়া হলো। ঠিক ঘরে পোষা হতো না। বরং নিজের মতোই বিড়ালরা ঘুরে বেড়াতে থাকে। এতে ফল পাওয়া গেল। দ্রুতই দ্বীপ থেকে ইঁদুরের উপদ্রব দূর হলো। আর এ-দিকে বিড়ালের বংশবিস্তার তো আর থামানোর কেউ নেই। তাই বলে এত?
এমনিতেই দ্বীপটিতে খুব বেশি মানুষ থাকেনা। যেহেতু বিড়ালগুলো স্বাধীনভাবেই দ্বীপে ঘুরে বেড়াতো, তাই বিড়ালের সংখ্যা রাতারাতি বাড়তে শুরু করে। আর এভাবেই দ্বীপটিতে বিড়ালের সংখ্যাধিক্য ঘটে। এখন তো গেলে বিড়াল ছাড়া অন্য প্রাণী চোখেই পড়বে না প্রায়।
জাপানের অধিবাসীদের কাছে বিড়াল একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। সচরাচর বিড়ালকে সৌভাগ্য এবং মঙ্গলের প্রতীক বিবেচনা করা হয়। এখনো জাপানের অনেক দোকানের সামনে আঙুল উঁচিয়ে রাখা বিড়ালের মূর্তি দেখা যাবে। আর তাশিরোজিমায় তো বাস্তবের বিড়ালেরই অভাব নেই। যদিও এই দ্বীপটি দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বহু পরে। ২০১১ সালের সুনামিতে ছোট দ্বীপের বেশ কজন বাসিন্দারা বেশ আতঙ্কেই ছিলেন। এবার বোধ হয় আর রক্ষে নেই। কিন্তু তেমন ক্ষয়ক্ষতি আর হয়নি। ওই যে সৌভাগ্যের প্রতীক! স্থানীয়দের ধারণা এই বিড়ালের জন্যেই তেমন ক্ষয়ক্ষতি আর হয়নি।
২০১৩ সালেই এই দ্বীপের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আর তখন থেকেই দ্বীপটিতে বিড়াল-প্রেমীদের আনাগোনা। মাত্র একদিনের এই ভ্রমণটি বেশ সহজ। টোকিও থেকে সেন্ডাই ট্রেনে চড়ে আসবেন। চার ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে সেন্ডাই নেমে কিছুটা বিশ্রাম নিতেই পারেন। সেন্ডাই থেকে এবার গন্তব্য এশিনোমাকি। সেখানে দেড় ঘণ্টা ট্রেনে কাটিয়ে ফেরিতে চড়ে তাশিরোজিমায় পৌঁছানো যাবে মাত্র ৪০ মিনিটে। মনে রাখবেন, সারা দিনে ৩ থেকে ৪টি ফেরিই পাওয়া যায়। তাই একবার মিস করলে আর যাওয়া হবে না।
দ্বীপে পৌঁছানোর আগেই বিড়াল চোখে পড়বে। এই দ্বীপে বিড়াল আর মানুষের অনুপাত ৩:১। কিন্তু শুধুই কি বিড়াল দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে। এখানে এলে মাঙ্গা দ্বীপে ঘুরে আসতে পারেন। জাপানের মাঙ্গার কথা তো জানেন নিশ্চয়ই? তাশিরোজিমার দক্ষিণে গেলেই বিখ্যাত বিড়াল চিত্রশিল্পী শোতারো ইশিনোমরির কাজ নিজ চোখে দেখে আসতে পারবেন।
তাশিরোজিমায় দুটো গ্রাম আছে। এই দুই গ্রামের মাঝে গেলেই বিড়াল মন্দির চোখে পড়বে। স্থানীয়রা বিড়াল-দেবতাকে এখানেই ভোগ দেয়। আর হাইকিং করার মতো জায়গাও তাশিরোজিমায় আছে। তাই এক দিনের ভ্রমণের জন্য তাশিরোজিমার চেয়ে সুন্দর জায়গা আর হয় না। স্থানীয় সিফুডের দোকান থেকে কিছুক্ষণ খাওয়াদাওয়া সেড়েই আবার সন্ধ্যের আগে আগে ফিরে আসতে পারবেন সহজেই। আর বিড়ালদের সাথে চমৎকার সময় কাটানোর সুযোগ তো আছেই। অনেকেই বিড়ালদের জন্যে খাবার নিয়ে আসে। তাদের খাবার দেয়ার দৃশ্যটাও কম সুন্দর নয়।