এক গ্রামে এক নারী
গ্রাম বলতেই আমরা বুঝি কয়েকটি পরিবার এক সাথে থাকে। সেই পরিবারে নারী-পুরুষ সবাই থাকে, এক সাথে উৎসব-অনুষ্ঠানে মেতে থাকে। কিন্তু এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। এমনই এক ব্যতিক্রমী গ্রাম রয়েছে, যার বাসিন্দা শুধু একজন।
সবুজ ঘাস আর সোনালি ধানের মাঠ পেরিয়ে আসে একটি গ্রাম। গ্রামটি উত্তর নেব্রাস্কা, দক্ষিণ ডাকোটা সীমানা বরাবর মনোয়ি নামে। বর্তমান জনসংখ্যার কারণে হাফ কিলোমিটারের এই গ্রামটি বিশ্বের কাছে একটি আলোচনার বিষয়। কারণ, গোটা গ্রামে জনসংখ্যা বলতে শুধু একজন নারী। গ্রামটিতে ১৭ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন একা একজন নারী৷ গ্রামটিতে একা বসবাস করা ওই নারীর নাম এলসি এলার। তাঁর বয়স প্রায় ৮৮ বছর।
মনোয়ি, নেব্রাস্কা প্রদেশের আমেরিকার একমাত্র সংযুক্ত পৌরসভা। তবে শুরু থেকে এই গ্রামের জনসংখ্যা একজন ছিল না ৷ ১৯৫০ সালে এই শহরটিতে পুরোপুরি ১৫০ জনের মতো বাসিন্দা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এখানকার জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে৷ কারণ, নতুন প্রজন্ম বড় শহরগুলোর দিকে পাড়ি জমাতে থাকে। এরপর পরিস্থিতি এমন হয় যে ২০০০ সালের আদমশুমারি মধ্যে গ্রামটিতে ছিল মাত্র দুজন বাসিন্দা। তাঁরা হলেন এলসি এবং তার স্বামী রুডি।
২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত এই গ্রামে দুজন বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালে এলসির স্বামীর মারা যান। আর তিনি মারা যাওয়ার পর শহরটিতে এলসি একা।
আর এই গ্রামের একমাত্র বাসিন্দা হওয়ায় তিনি মেয়র হিসেবেও কাজ করেন। মেয়র হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বছরে একবার অদ্ভুত একটি কাণ্ড করেন। তিনি প্রতিবছর একবার প্রচারের পোস্টারগুলো ঝুলিয়ে মেয়র নির্বাচনের বিজ্ঞাপন দেন, তারপরে নিজের পক্ষে ভোট দেন।
মেয়র হিসেবে নিজেই ৫০০ ডলার করে ট্যাক্স প্রদান করেন এবং নিজের মদের লাইসেন্সও দিয়েছিলেন নিজেকে। এ-ছাড়া, বছরে একবার করে পৌর সড়ক পরিকল্পনা করেন। গ্রামের স্ট্রিটলাইটের জন্যও তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ গ্রহণ করে সেই অর্থ তিনি গ্রামের উন্নয়নের কাজে লাগান।
গ্রামে একটি পাবলিক স্পেস হিসেবে একটি লাইব্রেরিও তৈরি করেছেন। সেই লাইব্রেরিটি করা হয়েছে প্রয়াত স্বামীর স্মরণে। লাইব্রেরিতে ৫০০০ বই রয়েছে। এখানে মাত্র দুটি সরকারি ভবন ও বেশ কয়েক ডজন কাঠামো রয়েছে, যা এখন পরিত্যক্ত। গ্রামটিতে বাসিন্দা না থাকলেও ভবন রয়েছে তিনটি, যার একটি এলসির দখলে রয়েছে।
মনোয়ি একমাত্র গ্রাম, যেখানে মাত্র একজন বাসিন্দাকে নিয়েই একটি গ্রাম পরিচালনা হয়। এ কারণেই গ্রামটি ও গ্রামটিতে বসবাসকারী একমাত্র বাসিন্দা নারীও বিশ্বের কাছে বেশ পরিচিত।
যদিও এলসির দুটি সন্তান রয়েছে এবং তারা সবাই বড় শহরে বসবাস করেন৷ তবে তিনি তাঁর স্বামীর স্মৃতিকে ঘিরেই কাটিয়ে দিতে চান বাকিটা সময়। তাইতো পুরো গ্রামের একা বাসিন্দা হয়েই কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন৷ তাঁর খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন লাইব্রেরিতে ভিড় জমে দূর থেকে আসা আগ্রহী পর্যটকদের।