Skip to content

২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘মেয়েরা রাতের রানি, আর পুরুষেরা পরিশ্রমী’! 

মেয়েরা ঘরে দেরী করে ফিরলে হয়ে যায় 'রাতের রানি' আর পুরুষেরা যখন রাত করে ঘরে ফেরে, তখন লোকের কাছে মনে হয়, তাঁরা অনেক ‘পরিশ্রমী’। অনেক কাজ করে বাড়িতে ফিরেছে তারা। কিন্তু রাতে মেয়েরা বাইরে থাকলে, তাদেরকে ‘রাতের রানি’ ছাড়াও লিঙ্গ বৈষম্যের অনেক মন্তব্যই এ দেশে করতে দেখা যায় ।

 

‘রাতের রানি’ শব্দ প্রচলনের উৎপত্তি কোথা থেকে হলো? বেশ কিছু দিন আগে আমাদের চলচ্চিত্র জগতের এক অভিনেত্রীসহ আরো কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার কারণে একটি উল্লেখযোগ্য শব্দ ভেসে বেড়িয়েছে অনেক দিন। শব্দটা হলো ‘রাতের রানি’। সে-সময় যে সংবাদ সম্মেলন হয়, সেখানে গ্রেফতারকৃত দুইজনকে বলা হয় ‘রাতের রানি’। শব্দটি যথেষ্ট অপমানজনক এবং একটি নারী-বিদ্বেষী মন্তব্য। এ কারণে অনেকেই প্রতিবাদ স্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ছবির সাথে 'রাতের রানি' শব্দটি যোগ করে।

 

‘মেয়েরা রাতের রানি, আর পুরুষেরা পরিশ্রমী’! 

 

এই মন্তব্য নারীদের ওপর প্রয়োগ করেই যেন অধিক আনন্দ পায় এই সমাজ। এবং এই মন্তব্যে কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ সচরাচর দেখা যায় না। কারণ, এই সব মন্তব্য খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে সমাজে।

 

একটা মেয়ে ঘর থেকে বের হলে রাস্তার মানুষদের প্রতি মুহূর্তে চাক্ষুষ নজরানার শিকার হয় প্রতিদিন। এই কারণে নারীকূলও এই বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে চলাফেরা করার প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হয় রোজ। 

 

‘মেয়েরা রাতের রানি, আর পুরুষেরা পরিশ্রমী’! 

 

কিন্তু পরিবারে গিয়েও তাদের ঠাঁই হয় না। পরিবার একটা মেয়ের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে। সার্বক্ষণিক নানা-কিছু নিয়ে বাঁধাধরা নিয়ম, সম্মানহানির ভয় দেখানো, কথার জবাব দিতে মানা করার জন্য অনেক অবদমনের একটা যাত্রা পার করে মেয়েরা। ফলে মানসিকভাবে অনেকেই বিরূপ ফলাফলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

 

একই পরিবারে ছেলে আর মেয়ে একসাথে বেড়ে উঠলেও, তাদেরকে ভিন্নভাবে বড় করে তোলা হয়। চাকরি-জীবনেও কোনো স্বাধীনতা থাকে না সেই নারীর।

 

চাকরি যত ভালোই হোক না কেনো, বাড়ির বাইরে যদি যেতেই হয়, রাতে দেরী করে বাড়ি ফেরা যাবে না মেয়েদের। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার একটা জরুরি জিনিষ। তাদের চাকরির খাতিরে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতে পারে। রাত হওয়া তো অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। এই ধরনের পূর্বশর্ত দেয়া থাকে পরিবারের পক্ষ থেকে! 

 

‘মেয়েরা রাতের রানি, আর পুরুষেরা পরিশ্রমী’! 

 

ছেলেরা রাত করে আড্ডা দিতে পারে, ছেলেদের তো একটু বন্ধু-বান্ধব থাকবেই। কিন্তু মেয়েদের বন্ধু-বান্ধব এত বেশী থাকা যাবে না, মেয়েদের জীবনে দুই বেলা সময় বলে কিছু হয় না। তাদের দিনটা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বরাদ্দ থাকে। তাই মেয়েদের হয় দিনের বেলায় চাকরি করতে হবে, নয়তো দিনের বেলা বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে হবে। দিনের বেলায় কাজ করে সন্ধ্যায় মেয়েদের আড্ডা দেয়ার কোনো দরকার পরে না। যদি দরকারই পরে, তাহলে তারা 'রাতের রানি' হিসেবে পরিচিত হবে সমাজে!
 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ