প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের কবি কাজী রোজী
'ঝড়ের বৃত্ত থেকে সবাই আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।
যে ঝড় দেখা যায় সময়ে তা থেমে যায়
ক্ষয়-ক্ষতির ধ্বংসাবশেষ আগলে ধরে
আবার মানুষ বাঁচতে চায়
উজ্জীবিত করতে চায়
সৃষ্টি করতে চায় নতুন ইতিহাস।
মানুষ তা পারেও।'
মানুষ নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায়। একসময় মানুষ তা করতেও পারে। এত সুন্দরভাবে মানুষের জীবনের ঝড়কে প্রাকৃতিক ঝড়ের সাথে তুলনা করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাওয়া মানুষটি আর কেউ নন, সবার প্রিয় কবি কাজী রোজি।
কাজী রোজী পেশায় একজন কবি, সরকারি চাকরিজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি সাতক্ষীরায়। তাঁর বাবার নাম কাজী শহীদুল ইসলাম। কাজী রোজী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সরকারি চাকরি দিয়েই শুরু করেছিলেন নিজের কর্মজীবন এবং ২০০৭ সালে তথ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নেন।
কাজী রোজী ১৯৬০-এর দশকে কবিতা লেখা শুরু করেন। এরপর কাব্যগ্রন্থ, জীবনীগ্রন্থও লেখেন তিনি। তাঁর রচিত কাব্যগুলো হলো: পথঘাট মানুষের নাম, লড়াই, নষ্ট জোয়ার, আমার পিরানের কোন মাপ নেই। জীবনীগ্রন্থ: শহীদ কবি মেহেরুন নেসা এবং গবেষণা গ্রন্থ হলো, রবীন্দ্রনাথ: রসিকতার কবিতা।
তিনি রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার জন্য নির্ধারিত সংরক্ষিত নারী আসন (৪৩ নং) থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় সংসদের গ্রন্থাগার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী ও তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিবিদ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কাজী রোজী।
নিজের সৃষ্টি রচনার মাধ্যমে তিনি জায়গা করে নেন মানুষের মনে। কবিতায় তিনি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪১৯, ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, সা'দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন।
২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি কাজী রোজী।