স্যানিটারি প্যাডঃ প্রয়োজনীয়তা নাকি বিলাসিতা
পিরিয়ড নারীদেহের অতি সাধারণ একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। যদিও শারীরিক-শিক্ষা পাঠ্যবইয়ে বলে কাপড় বা তুলা ব্যবহার করা অস্বাস্থ্যকর, তবুও বাস্তবে এর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী প্যাড ব্যবহার করেন। বাকিরা মূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য অন্যান্য উপায় বেছে নিয়েছেন। কারণ, ২০১৯-২০ এর বাজেটে স্যানিটারি প্যাডের কাঁচামাল আমদানির উপর অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও অন্যান্য কর সংযোজনের পর প্যাডের যে মূল্য দাড়ায় সেটা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।ফলে, প্যাড একটি বিলাসী পণ্যদ্রব্য হয়ে ওঠে।
কিন্তু , এইযে ১২০ টাকা প্যাকেটের প্যাড, এই প্যাডের শোষণ ক্ষমতাও খুব একটা ভালো থাকে না। যাদের রক্তপাত বেশী হয় তাদের জন্য দেশী প্যাড ব্যাবহার করাটা মোটেই সুবিধার হয় না।
তাছাড়া, প্রতিমাসে প্যাডের জন্য ২৪০ টাকা কমপক্ষে খরচ করা অনেকে পরিবার ও মানুষের জন্য একটা বিলাসিতা। গ্রামাঞ্চলের মানুষও কল্পনাই করতে পারে না তারা প্রতিমাসে আড়াইশ টাকা ব্যবহার করবে এমন একটা জিনিষের জন্য যেটা ফেলে দিতে হয়।তাই তাঁরা তুলা বা কাপড় ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই তুলা বা কাপড় ব্যবহার করার জন্য জরায়ুর নানা সমস্যা নারীদের পিছু ছাড়ে না। বাংলাদেশের মত এত বেশী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী আর কোথাও নেই। এছাড়াও পিরিয়ড নিয়ে অযাচিত লজ্জা নারীকে আরো আড়ষ্ট করে তোলে। পিরিয়ডের সময় যে কাপড়টি সে ব্যবহার করে সেটি রোদে শুকাতে দেয়া নিয়েও তাঁকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এভাবে একজন কিশোরীর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
অথচ, পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার নারীকে অনেক ক্ষেত্রে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করাতেও সক্ষম। গবেষণায় দেখা যায়, একটি বিদ্যালয়ে যদি বিনামূল্যে প্যাডের সরবরাহ করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র নারীদের কর্ম-স্পৃহা বাড়ায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, যেমন আফ্রিকা, নেপালের মত দেশগুলোতে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্যাড সরবরাহ করা হয়। কারণ তাঁরা বিশ্বাস করেন, বিনামূল্যে প্যাড বিতরণের মাধ্যমে নারী শিক্ষার অগ্রগতি সম্ভব।
স্যানিটারি প্যাডের উপর ট্যাক্স আরোপ করার প্রবণতা অনেক দেশেই ছিল। তবে সাধারণ স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার কথা চিন্তা করে সে দেশ গুলোতে স্যানিটারি প্যাডের উপর কর সংযোজন বন্ধ করেছে। আয়ারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে স্যানিটারি প্যাডের উপর কোনো কর দিতে হয় না। অস্ট্রেলিয়াতেও এবছর থেকে প্যাডের উপর কোন ধরণের কর রাখছে না। তবে বাংলাদেশে কেন নয়? যেদেশে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে সে দেশে নারীরা প্যাডের খরচকে বাহুল্য মনে করেন বলেই প্যাড ব্যবহার করেনা। এর মধ্যে প্যাডের ওপর কর যদি বাড়ানো হয়, তাহলে সে নারীরা আরো বেশী অনুৎসাহিত হয়ে পড়বে। যার ফলে , নারীদের নানাবিধ শারীরিক স্বাস্থ্য জটিলতার পাশাপাশি বাড়বে মানসিক জটিলতা। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে নারীর অংশগ্রহণ আরো কমে যাবে।