Skip to content

২রা জুন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সহজ প্যারেন্টিং যায় না করা সহজে?

প্যারেন্টিং একটা মানুষের গড়ে ওঠার স্তম্ভ। সঠিক প্যারেন্টিং একটা মানুষের বড় হয়ে ওঠার একটা ধারণা দেয়। কে কতটা মানবিক হবে, কে কতটা নিষ্ঠুর হবে, কার আচরণগত ত্রুটি থাকে সেটা প্যারেন্টিং এর উপরই নির্ভর করে। প্রচলিত প্যারেন্টিং যেহেতু সমাজের নিদারুণ নিয়মের আবেষ্টন সেহেতু সেখানে নারী পুরুষের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

 

 

যেমন সন্তান যখন ছেলে সন্তান তখন তার উপরে শুরু থেকেই একটা দায়িত্ব অর্পণের ভার চলে আসে। ছেলেমানুষ মানেই হতে হবে পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ। তাকে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের হাল ধরতে হবে৷ জীবনে এত শখ আহ্লাদ লালন পালনের সময় তাকে এই সমাজ দিতে চাইবে না। ২৫ বছর বয়সেই স্টেবল চাকরি করে পরিবারের হাল ধরে বিয়ে করে নেয়াটা আবশ্যক হয়ে যায়। কারো যদি নিজেকে জানতে বুঝতে একটু দেরী হয়৷ নিজের ক্যারিয়ার বাছাই করতে বিলম্ব হয় তখন তাকে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার নিয়ম কানুন দ্বারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার সামিল হবে। লোকমুখে অপদার্থ শব্দটিও শুনতে হতে পারে অনেকের।

 

 

কিন্তু সন্তান টি যখন কন্যা সন্তান হয়, তখন তার প্রতি সমাজ প্রতিনিয়ত ভিন্ন আচরণ করবে৷ যেমন কন্যা সন্তান মানেই সে বাবা-মায়ের আপন কেউ না। স্বামীর ঘরই আসল ঘর। নারী মানেই পুরুষের অধীন। যেহেতু একজন পুরুষ তার ভরণপোষণ এর দায়িত্ব নিচ্ছে তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বা দায়িত্ব স্বরূপ তাকে স্বামীর সংসার গুছিয়ে রাখতে হবে। নিজের লক্ষ্য, শখ, ক্যারিয়ার সবই একেকটা বাহুল্য।  

 

 

এখন কথা হচ্ছে, এই যে লিঙ্গভেদে ভিন্ন রকম প্যারেন্টিং স্টাইল। এতে কিছু সুবিধা আছে বটে আবার অসুবিধাও আছে। সুবিধা হলো, এক লিঙ্গের মানুষ নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে  আবিষ্কার করছে। প্রচণ্ড আউট-গোয়িং একটা মানুষ হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাতে নিজে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর যেহেতু প্রতিকূলতায় বসবাস করতে মানুষ অভ্যস্ত প্রাণী সেহেতু সে নিজের জীবনটা এত কিছুর মধ্যে ব্যালেন্স করে নিতে পারে। কিংবা অনেক ক্ষেত্রে না পেরে তার অন্তর্নিহিত হতাশার বহিঃপ্রকাশ করবে।

 

 

তবে এই সুবিধার অন্তরালে আরেক লিঙ্গের অনেক সময় সুবিধা কিংবা ন্যায্যতাই হারিয়ে যায়। নিজেকে সে আবিষ্কার করে চার দেয়ালে বন্দী এক জীবনে। বাইরে বের হলেও তার লিঙ্গ সরূপ আচরণ তাকে করতে হয়। আউট-গোয়িং হওয়া থেকে নিজেকে পারিপার্শ্বিক চাপে বিরত রাখে। চাইলেই সে চ্যালেঞ্জিং খাতে অংশগ্রহণ করানোর মত দুঃসাহস অনেক সময়ই করে না। নাগরিক জীবনের এত কোলাহলপূর্ণ আবহ তার খুব কঠিন বলে মনে হয়। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও কাজকর্ম গুলো নিয়ে সংশয়ে ভোগে। নিজেকে সে আস্তে আস্তে মানুষ ভেবে বড় হওয়ার বদলে একজন নারীকে কেবলই নারী এবং একজন পুরুষকে কেবলই পুরুষ হিসেবে চিনতে শেখে।

 

 

তাহলে বলাই যায়, প্যারেন্টিং স্টাইলে ভিন্নতা থাকার কারণে ছেলে মেয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়ে বড় হচ্ছে। ফলে পুরুষ মানুষ না হয়ে পুরুষে পরিণত হচ্ছে। আবার নারীও মানুষ না হয়ে নারীই থেকে যাচ্ছে। সন্তান লালন পালনের সময় কেউ নিশ্চয়ই আগে থেকে এটা ভেবে সন্তান লালন পালন করে না যে তার কতটা পুরুষালী হবে বা কতখানি মেয়েলী হবে। সবাই চায় তার সন্তানকে সে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

 

 

কিন্তু বিদ্যমান সমাজের কঠিন আবরণে প্যারেন্টিং এ পরিবর্তন আনা টা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। ছোটবেলা থেকে পারস্পরিক সম্মান যদি সন্তান কে শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে অনেক অংশেই লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে যে সব অদ্ভুত নিয়ম সমাজে প্রতিষ্ঠিত সেগুলো দূরীকরণ আস্তে ধীরে সম্ভব। কেননা আমরা দিনকে দিন সভ্য হচ্ছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা কে খর্ব করছি প্রতিনিয়তই।  একটা স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশ গড়ার দায়িত্ব থাকে বাবা মায়ের। কারণ, চ্যারিটি ঘর থেকে শুরু না করলে বাইরেই বা কি করে সম্ভব।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ