সদর দরজার সাজ-সজ্জা
বাড়ি নিজের কিংবা ভাড়া যেটাই হোক না কেন, আমরা সবাই চাই তাকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে রাখতে। তাই তো আমাদের রুচি, পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা সবকিছুই পরিচায়ক হয়ে ওঠে আমাদের বাড়ি। সেখানেই থাকে একচিলতে বাগান, কিংবা আয়নার সমাহার। সেখানে থাকে নানা রঙের আলপোনা, আর আলো-আধারের খেলা। তবে অন্দরমহলকে নিজের মতো করে সাজাতে আমরা যতটা চিন্তা বা চেষ্টা করি, সদর দরজার ক্ষেত্রে তেমন মনযোগ দেই না কেউই। অধিকাংশ সময় বাড়ির এই অংশ থাকে উপেক্ষিত। কেননা, আমরা অনেকেই হয়তো ভাবি না, বাড়ির এই অংশটিই আমাদের রুচিবোধের প্রথম দর্শন বহন করে। দরজাই যেন অন্দরমহলের আয়না।
বাহিরমহলের রঙ
সিঁড়িঘর বা লিফট থেকে প্রথমেই চোখে পড়ে বাসার প্রবেশদ্বার। তাই এখানে রঙের ব্যবহারে বিশেষত্ব আনা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে দরজায় গাঢ় রঙের সাথে মিলিয়ে আশপাশের দেয়ালে হালকা রং ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে দরজাটি এক আলাদা বিশেষত্ব পাবে। আবার দরজায় মনের মতো করে টেক্সচার্ড পেইন্টও করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে এখানে প্রাধান্য পেতে পারে বিভিন্ন রকম অ্যামোনিয়া এচিং দিয়ে করা ফ্লোরাল বা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ডিজাইনও।
প্রবেশদ্বারে প্রকৃতির ছোঁয়া
আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন সেক্ষেত্রে আপনার সদর দরজার বাইরে স্থান পেতে পারে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ, টব কিংবা ছোট ছোট গাছের গুড়ি। সিঁড়িঘর থেকে দরজার দুপাশে এমন সাজ যেমন অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাবে, তেমনি থাকবে সবুজের ছোঁয়া। এছাড়াও দরজার পাশের দেয়ালে স্থান পেতে পারে লোহা কিংবা স্টিলের ফ্রেম, যেখানে রাখতে পারেন ছোট ছোট মানি প্ল্যান্ট কিংবা ক্যাকটাসের জার। আর দরজার পাশে জানালা থাকলে সেখানে বোগেনভেলিয়ার মতো লতানে গাছ লাগাতে পারেন। দরজার বাইরের এসব গাছের গুড়ি কিংবা ছোট ছোট টবের জন্য বেশিদূরে যেতে হবে না একদমই।
রাজধানীর আগারগাঁও, ধানমণ্ডি, কলাবাগান মাঠের পাশে, আবাহনী মাঠের উল্টা পাশে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উল্টোপাশে, সায়েন্স ল্যাব, কার্জন হল সংলগ্ন ফুটপাথ, বকশীবাজারে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন এ ধরনের গাছ ও টব। প্রজাতি ভেদে ফুলের চারাগাছের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা। পাতা বাহারের চারা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। লতাজাতীয় গাছের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা। কলম করা ফল গাছ ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
জুতসই জুতোর তাক আর ফ্রেমবন্দি আয়না, মুখোশ, ছবি
আপনার শৈল্পিক মনোভাব প্রকাশে সদর দরজার পাশে রাখতে পারেন মানানসই জুতোর তাক। সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন কাঠের কিংবা পার্টেক্সের তৈরি জুতোর তাক। এর ফলে একদিকে নোংরা কিংবা ছেঁড়া জুতোগুলো দরজার বাইরে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকবে না। অন্যদিকে এর ভেতরেও ছাতাসহ আনুসাঙ্গিক কিছু জিনিস রাখতে পারবেন। তাকের ওপর কিছুটা জায়গা খালি পেয়ে যাবেন, যেখানে বসিয়ে দিতে পারেন পছন্দমতো আয়না কিংবা ছবির ফ্রেম। সেই সঙ্গে এখানে স্থান পেতে পারে সেনিটাইজার, ছোট ছোট গাছের টব ইত্যাদি।
ছোট ছোট গাছ লাগানোর জন্য মাটির মগ, গ্লাসের দাম পড়বে ৩০-৫০ টাকা, জগ ১০০-১২০ টাকা, প্লেটগুলো পাবেন ৩০-৯০ টাকায় পেয়ে যাবেন আড়ং, যাত্রা, ক্লে স্টেশন, সানরাইজ প্লাজার সিরমিক, মিরপুরের শিল্পচর্চা, মোহাম্মদপুরের আইডিয়া ক্র্যাফটস, শাহবাগ আজিজ মার্কেটে আইডিয়াস কর্নারসহ বেশ কিছু দোকানে।
এছাড়াও মাটির কাপ-পিরিচ প্রতিটির দাম পড়বে ২০-৪০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের মাটির বাটিগুলো পাওয়া যাবে ৩০-১২০ টাকায়। পাশাপাশি মুখোশের দাম পড়বে ১২০-৮৫০ টাকা। বিভিন্ন নকশার শো-পিস ৬০-১০০০ টাকা, মাটির আয়না ১২০-৫০০ টাকা, ওয়াল টব ৯০-৩৫০, মাটির ঘড়ি ২৫০-৪৫০ টাকা, মাটির মোমদানি স্ট্যান্ড ৫০-৩৫০ টাকায় পাওয়া যাবে।
দ্বারে রঙিন পাপোশ
রংবেরঙের হাতে বোনা পাপোশ এখন ট্রেন্ড। বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় কিনতে পারেন এ রকম হাতে বোনা পাপোশ। সেখান থেকেই একটা-দুটো কিনে রেখে দিন সংগ্রহে। প্রয়োজনমতো পাল্টে পাল্টে ব্যবহার করুন। দরজার বাইরে যেহেতু রাখবেন, তাই একটু গাঢ় রঙের পাপোশ রাখাই ভাল।
নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর শপিংমলসহ প্রায় সব অঞ্চলের সবগুলো মার্কেটেই পাপোশ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য, উপাদান ও ডিজাইনভেদে এর দাম ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
নেমপ্লেট
নেমপ্লেটেও নজর কাড়া যায় অতিথির। বিভিন্ন ধাতুর, কাঠের, পেপারবোর্ডের নেমপ্লেট পেয়ে যাবেন বাজারে। আবার বাড়িতে বসে কার্ডবোর্ডের উপর রং করে নকশা তুলে নিজেও নেমপ্লেট বানিয়ে নিতে পারেন। অনেকে আবার ব্যক্তিগত বিষয় কাউকে জানাতে চান না। তাই নিজের পুরো নামও রাখতে চান না নেমপ্লেটে। সে ক্ষেত্রে নামের আদ্যক্ষরগুলো বেছে, বড় করে ঝুলিয়ে দিন সদর দরজায়।
রাজধানীর আড়ং, মোহাম্মদপুর, টাউনহল, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেমপ্লেটের দোকান রয়েছে। ডিজাইনভেদে ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে দরজার জন্য নেমপ্লেট বানিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়াও একই দামের মধ্যেই কাঠের ওপর পছন্দসই নাম বা সাইন বা ছবি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
‘কড়া’ নাড়তে
নিজের রুচির সাথে মিল রেখে দরজায় লাগিয়ে নিতে পারেন ভিন্নধর্মী কড়া। তা হতে পারে সিংহের মুখ বা বুদ্ধমূর্তি অথবা হাতের মুদ্রা। এ ধরনের বিভিন্ন কড়া পেয়ে যাবেন আশেপাশের মার্কেটগুলো থেকেই। আর কড়া বা কলিংবেল না লাগিয়ে দরজার বাইরে ঝুলিয়ে দিতে পারেন ছোট পিতলের ঘণ্টা। এটি আপনার সদর দরজার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুনে। রাজধানীর নিউমার্কেট, পান্থপথ, শেওড়াপাড়া ছাড়াও বিভিন্ন শপিংমলে মনমতো কড়া পেয়ে যাবেন।
বর্তমান সময়ে প্রতিটি বাড়ির সদর দরজাতেই দেখা যায় ভিন্ন ঘরানার কারুকাজ। সদর দরজার এমন ডিজাইনের বাইরেও এর সাজ-সজ্জার মাধ্যমে একদিকে যেমন মিলতে পারে মানসিক প্রশান্তি, অন্যদিকে বাসিন্দার রুচির পরিচয় পেতে পারেন অতিথি।