অনন্যা শীর্ষদশ জয়ী ফাল্গুনীর বিয়ে যেন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের উদাহরণ
ছোট বেলা থেকেই পরিচয়, তবে প্রেমের সম্পর্ক পাঁচ বছর ধরে। যার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন, শিশুকালে সে দুই হাতই এক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন। সব কিছু জেনেও সেই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা সদরের বাসিন্দা সুব্রত মিত্র। অবশেষে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে, প্রেয়সী ফাল্গুনী সাহার সঙ্গে।
দুই পরিবারের সম্মতিতে বুধবার রাতে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী শংকর মঠ মন্দির প্রাঙ্গণে বিয়ে হয় তাদের। বর সুব্রত মিত্রর মহানুভবতা ও দৃষ্টিভঙ্গি কতটা উচ্চমানের তা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন অনেকেই। বিয়েতে আগত অতিথি ও স্বজনরা বলেন, বিয়ের আয়োজনে কোনো ঘাটতি ছিল না। মঙ্গলবার এখানে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও হয়েছে।
সুব্রত মিত্র পটুয়াখালীতে বেসরকারি সংস্থা কোডেকের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি দুই হাত হারা কনে ফাল্গুনীও পিছিয়ে নেই। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে বর্তমানে তিনি বরিশাল ব্র্যাক অফিসে সহকারী এইচআর পদে কর্মরত। শুধু তাই নয়, অদম্য এই নারী ২০১৯ সালের পাক্ষিক অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননায়ও ভূষিত হয়েছেন। দুই জনের বাড়ি গলাচিপা হলেও, ফাল্গুনী নগরীর ব্রজমোহন কলেজ সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
ফাল্গুনী সাহা বলেন, ‘২০০২ সালে গলাচিপায় আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে বৈদ্যুতিক শকে আহত হন, পরে দুই হাতই কেটে ফেলতে হয়। আমি নিজেকে কখনো দুর্বল মনে করিনি। দুই হাতের যতটুকু অংশ ছিল, ততটুকু অংশ দিয়েই আমি আমার পড়াশুনা শেষ করেছি এবং এখন চাকরি করছি।’
প্রসঙ্গত, ফাল্গুনী ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। ২০১৩ সালে উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট বিষয়ে ২০১৮ সালে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।
ফাল্গুনী আরো বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা সবাই অবগত। দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো বিষয় নয়। আমাদের বিয়েটা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি।
সুব্রত মিত্র বলেন, ‘ফাল্গুনীকে আমি ছোট বেলা থেকে চিনি। ও যখন ভার্সিটিতে পড়তো, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথা হতো। ওর হাত নেই এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা লোকের হাত নেই, তাই সে বিয়ে করতে পারবে না, তার ফ্যামিলি হবে না, এমনটা হতে পারে না এবং এমন চিন্তা-চেতনা আমারও নাই। আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, আমি ওকে ভালোবাসা শেখাই এবং আমি ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। সবশেষ আমরা বিয়েও করেছি। আমরা সামনের দিনে যেন ভালো থাকতে পারি আশীর্বাদ করবেন।’
শংকর মঠের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কর্মকার ভাষাই বলেন, ‘এই বিয়ে আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এমন মহানুভবতা দেখার সুযোগ হয়েছে আমাদের। সুব্রত মিত্রর হৃদয় কতখানি বড় সেটা বুঝতে পেরেছি। সত্যিই আমরা অভিভূত।’