জাত-ধর্ম লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনে ফেসবুকের নিষেধাজ্ঞা!
জনগণের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সোশ্যাল মাধ্যমটির কথা উঠলে সবচেয়ে প্রথমে আসবে ফেসবুকের কথা। ফেসবুক তার কাজের মাধ্যমে সবসময় আলোচনায় রয়েছে। সম্প্রতি ভারতে সাম্প্রতিক দাংগা উস্কানিমূলক সাজেশন আসার জন্য ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকের বিরুদ্ধে এসকল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। যেখানেই সমস্যা সেখান থেকে শুরু করতে যাচ্ছে ফেসবুক।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এখন থেকে বিজ্ঞাপনদাতারা আর ফেসবুক ব্যবহারকারীর লিঙ্গ পরিচয়, ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের মতো বিষয়বস্তু লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন না। এর আগে ফেসবুক ব্যবহারকারীর লিঙ্গ পরিচয়, ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট, পড়ার ধরন বা পছন্দ করার ইতিহাসের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন ঠিক করে দেওয়ার সুযোগ পেতেন বিজ্ঞাপনদাতারা। ফেসবুক এখন সে সুবিধা বন্ধ করে দিচ্ছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে তারা বিস্তারিত টার্গেটিং অপশন মুছে ফেলবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্ট, জাতি বা জাতিসত্তা বিষয়ক কথাবার্তা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, ধর্ম, যৌনতা, সংস্থা বা ব্যক্তির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়াগুলির ওপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করতে পারতেন।
টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্টের গবেষণা অনুসারে, গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে আক্রমণের ঘটনার পরও ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে উসকানিমূলক আলোচনার পাশে অস্ত্রের আনুষঙ্গিক এবং বডি আর্মারের বিজ্ঞাপন পরিবেশন করা হয়েছিল। মেটা প্ল্যাটফর্মসের প্রোডাক্ট মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রাহাম মাড বলেন, ‘আমাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনদাতারা কীভাবে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে পারে সে সম্পর্কে আমরা মানুষের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশার সঙ্গে আরও ভালোভাবে মেলাতে চাই। এ ছাড়া নাগরিক অধিকার বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা টার্গেটিং অপশন অপব্যবহার রোধ করতে চাই।’
মেটার মোট আয়ের ৯৮ শতাংশই আসে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে। বিজ্ঞাপনদাতারা এই প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট জনসংখ্যা এবং ভোক্তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে কারণ প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের অনলাইন কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে প্রোফাইল তৈরি করে রেখেছে। মেটা তাদের মেসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে। এ অডিয়েন্স নেটওয়ার্কের মাধ্যম তৃতীয় পক্ষের অ্যাপেও বিজ্ঞাপন বিক্রি করে থাকে।গত বছরেই মেটা ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি মানুষ ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করেন।
মেটা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা যদি বিজ্ঞাপনদাতাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে না দেয় তবে তা রাজনৈতিক গ্রুপ ও বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজকের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের কর্মসূচির বেশির ভাগ ফেসবুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে। তাদের বিজ্ঞাপন অংশীদার এই টার্গেটিং অপশন বাদ যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা৷ কারণ তারা মনে করে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন তৈরিতে সহায়তা করত এটি। তবে অনেকে টার্গেটিং অপশন অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।’ টার্গেটিংয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বাদ দেওয়া হলেও বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বয়স, লিঙ্গ, পেশা ও অবস্থানগত নানা অপশন ধরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ চালু থাকছে।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই ফেসবুকের কার্যকলাপ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু নথি ফাঁসের পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যকলাপ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার প্রান্তিক এক প্রতিবেদনে মেটা বলেছে, ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রবণতা টানা চতুর্থ প্রান্তিকে কমেছে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতি ১০ হাজার কন্টেন্ট ভিউতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেখার হার দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশে যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
ফেসবুক তাদের কিছু খাতে পরিবর্তন আনার তোড়জোড় করতেছে বহুদিন যাবত। কিছু কারিগরি সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণ ভাবে কাজটি করা সম্ভব হয়নি। তবে ফেসবুক সচেষ্ট সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য এমন প্রতিজ্ঞার কথাই তারা জানিয়েছে।