অন্ধকার কেন ভয়ংকর?
নারীদের সাথে অন্ধকারের যেনো বরাবরই এক অদৃশ্য শত্রুতা। যুগে যুগে মশাল হাতে নারীরাই আলোর পথ দেখিয়েছেন সমাজ-সংসারকে। কিন্তু বারংবার সেই নারীদেরই ভয়ের কারণ হয়েছে অন্ধকার। যেখানে চাইলেও মশাল হাতে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। অন্ধকারের অতল গহ্বরে কেউ হারিয়েছেন চিরতরে কেউবা চালিয়ে যাচ্ছেন টিকে থাকার লড়াই।
হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এই অন্ধকারের সাথে নারীর যোগসূত্র কোথায়? তবে শুনুন, এই তো বেশ কিছুদিন আগে কাজ শেষে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ১১ টা। প্রকৃতির নিয়ম মোতাবেক একইরকম থাকলেও দুটি লিঙ্গের মানুষের জন্য তখন সময়টা দুরকম। নারীদের জন্য গভীর রাত আর পুরুষদের জন্য এইতো সবে সন্ধ্যা।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই রাস্তার পাশের লাইটগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। নাহ! কারো পরিকল্পনা নয়, লোডশেডিং। তবে ততোক্ষণে আশেপাশের মানুষের পরিকল্পনা শেষ। তাদের বৃহৎ পরিকল্পনা সময় নিয়েছে বড়জোর ৩০ সেকেন্ড। অন্ধকারেও যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো হায়েনার মতো হিংস্র চোখ। আলো ফিরে আসতে আর বেশিক্ষণ দেরী করলে হয়তোবা সেই ভয়ংকর অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে হতো চিরতরে।
এ গল্প এতো বড় শহরের কোনো একটি সরু গলির। কিন্তু এমন গল্প আমাদের শহর জুড়ে প্রতিটি অলিগলিতে রয়েছে। শুধু কি বাইরেই? ঘরের ভেতরকার অন্ধকার কি নারীর জন্য নিরাপদ?
তবে একটা ঘটনা বলি শুনুন, স্বামীর বাসায় আসতে দেরী হওয়ার কারণ জানতে চাইলো রানু। বাচ্চাদের সামনে হেসেখেলে কথা বলে আলো বন্ধ করে দিলো আসিফ সাহেব। অন্ধকারে বউয়ের চুলের গোছা ধরতে একটুও অসুবিধে হয়নি তার। অন্ধকার বরং তার সাহায্যই করছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত অন্ধকার গহ্বরে হাবুডুবু খেতে খেতে রানু আজকাল অন্ধকারকে ভয় পাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন৷
আমাদের চারপাশের প্রতিটি নারীই কখনো না কখনো সেই ভয়ংকর অন্ধকারকে অনুভব করে। চারপাশের আলো নিভে গেলে আকাশের চাঁদ তারা দেখার আনন্দ উপভোগ নয় বরং তাদের একটা ভয় আঁকড়ে ধরে। অদৃশ্য কোনো হাত এসে ছুঁয়ে দেয়ার ভয়, একটানে বিবস্ত্র করে ফেলার ভয়, চুলের গোছা ধরে আঘাত করার ভয়। তাইতো নারীদের কাছে অন্ধকার এতোটা ভয়ংকর!