স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে দরকার সচেতনতা
"স্বাস্থ্যই সকল সুখে মূল"। অথচ মানব স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক রয়েছে যেসব বিষয়ে মানুষের অনেক অজ্ঞতা রয়েছে। স্তন ক্যান্সার এমনই একটি সমস্যা যা সম্পর্কে এখনো অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। আর এ অসচেতনতাই স্তন ক্যান্সারকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এরমধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশিই নারী। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই পরিসংখ্যান গা শিউরে ওঠার মতো হলেও, সচেতনতার দিক থেকে আমরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে এই রোগটি কি, কিভাবে হতে পারে, বা কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এর থেকে মুক্ত থাকা যায় তা সম্পর্কে তারা জানেনই না। সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসকে স্তন ক্যানসার–সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। এর মূল লক্ষ্যই হলো পৃথিবীর সব নারীকে স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতন করে তোলা এবং এর প্রাথমিক পর্যায়েই তা শনাক্ত করতে পারা।
কিন্তু আদৌও কি সচেতনতা তৈরি হচ্ছে? স্তন ক্যান্সারে মৃত্যু ঝুঁকি যেমন বেশি তেমনি রোগ নির্ণয়ের প্রথম থেকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শতভাগ নিরাময়ও সম্ভব। আর তাই অধিক সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ সচেতনতা তৈরী বা বৃদ্ধির দায় কার?
আমাদের সমাজের নারীদের মধ্যে স্তন সংক্রান্ত কোনো জটিলতা প্রকাশ না করার প্রবণতা অনেক বেশি। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীতে এ সমস্যা আরো মারাত্মক। তবে শুধু গ্রামের দিকেই নয়, শহরের দিকেও স্তন ক্যান্সার নিয়ে অজ্ঞতা নেহাত কম নয়। কুসংস্কার ও লোক লজ্জার ভয়ে অধিকাংশ নারীই গুটিয়ে নেন নিজেদের।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় স্থানীয় চিকিৎসকের অভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেননা নারীরা। পুরুষ চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে অনীহা তো রয়েছেই। তার থেকেও বড় বিষয় হলো প্রাথমিকভাবে অনেকে লক্ষ্মণগুলো বুঝতেই পারেন না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলেই চিকিৎসকের কাছে আসা এবং শেষ পর্যায়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে স্তন ক্যান্সারের রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান।
কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিলে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। অসচেতনতার অভাবেই স্তন ক্যান্সার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার শুরুটা হওয়া উচিত পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই। গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোয় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশের বয়স ৫০ বছর বয়সের বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরা স্তন ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অল্প বয়সে ব্রেস্ট ক্যান্সার মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই শুরু থেকেই চেষ্টা করতে হবে আমাদের অজ্ঞতা দূর করার এবং লোকলজ্জা ও কুসংস্কারকে দূরে রাখার। প্রতিটি নারীর উচিত নিজে সচেতন হওয়া ও অন্যকে সচেতন করা। সর্বদা মনে রাখতে হবে প্রতিকার নয় চাই প্রতিরোধ। আর এই রোগ প্রতিরোধ করতে সচেতনতাই হতে পারে একমাত্র চাবিকাঠি।