সামিটের শারমিন পেলেন ‘এশিয়ার উইমেন অ্যাওয়ার্ড’
নারীই শক্তি। বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো কাজ নেই যা একজন নারীর হাতের বাইরে। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে মহাকাশে যাওয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর পদচারণা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তারা পাচ্ছেন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। নারীদের জন্য একটি অন্যতম সম্মাননা হলো ‘এশিয়া উইমেন অ্যাওয়ার্ড’। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নারীদের বিশেষ অবদানের জন্য তাদের এই সম্মাননা দেয়া হয়।
সম্প্রতি ভারতের মুম্বাইয়ে আয়োজিত ‘বিশ্ব নারী নেতৃত্ব কংগ্রেসে’ এই সম্মাননা দেওয়া হয়। এবছর এই সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশের এক নারী। তিনি হলেন শারমিন জামান। বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক শিল্পগোষ্ঠী সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন। সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় অসামান্য দক্ষতা ও অবদানের কারণে তিনি ‘এশিয়া উইমেন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।
সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহত্তম ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক অপারেটর এবং সবচেয়ে বড় বেসরকারি ইন্টারনেট সরবরাহকারী। টেলিকম ও আইসিটি সেক্টরের জন্য ফাইবার, গেটওয়ে এবং টাওয়ারের মাধ্যমে সামগ্রিক অবকাঠামো পরিষেবা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সিএমও এশিয়া এবং ডব্লিউডব্লিউএলসি নামে দুটি সংগঠনের এই সম্মাননা পর্বে শারমিনের পাশাপাশি কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া, সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল, ডায়ালগ আজিয়াটার মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের নারী নির্বাহীরা।
শারমিন জামানের জন্ম রাজশাহীতে। বাবা বদলির চাকরির কারণে তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা হাসানুন জামান তালুকদার বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক। মা জাকিয়া জামান গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে শারমিন ছোট। ভিকারুননেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে এসএসসি এবং ২০০০ সালে এইচএসসি পাস করেন।
শারমিন জামান ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চ্যানেল ওয়ানে এক্সিকিউটিভ এইচআর হিসেবে যোগদান করেন। সেসময় তিনি ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শেষ বর্ষের ছাত্রী। দুটো সেমিস্টার তখন বাকি। কিন্তু কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা দুটিই সমান তালে চালিয়ে যান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এক সেমিস্টারে চারটি ক্লাস ছিল। ক্লাসের দু’দিন বিকালের শিফটে অফিস করতেন রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত। বাকি তিন দিন দিনেই অফিস করতেন। বন্ধের দিনগুলোতে অতিরিক্ত পড়ে কাভার করতেন। বন্ধের দিন গ্রুপ স্টাডির বন্ধুদের সঙ্গে বসে পড়া তৈরি করতেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিন মাসের ইন্টার্নশিপ করতে হতো। কিন্তু আগে থেকে কাজ করায় পুরো সময়ের কর্ম অভিজ্ঞতা প্রেজেন্টেশন তৈরিতে কাজে লেগেছে। শিক্ষকরা তার প্রেজেন্টেশন দেখে খুবই প্রশংসা করেছেন।
স্নাতক শেষে তিনি টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনে যোগদান করেন কী-একাউন্ট ম্যানেজার কর্পোরেট (সেলস) হিসেবে। টার্গেট পূরণ করে সবসময় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। অফিস, অফিসের বাইরে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, গ্রাহকদের কীভাবে ডিল করতে হয়, কাজের প্রতি গুরুত্ব, ভালোলাগা ইত্যাদি বিষয়গুলো জ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখেছেন। তাদের কাছ থেকে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছেন।
এভাবে পাঁচ বছর গ্রামীণ ফোনে নিরলসভাবে কাজ করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালের শেষদিকে স্পেশালিষ্ট কর্পোরেট পদে পদোন্নতি হয় তার। ২০১২ সালে যোগ দেন সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগে ব্যবস্থাপক পদে। পদোন্নতি পেয়ে ২০১৬ সালে বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান হন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ব্যবসায় বিক্রয় ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখায় বাংলাদেশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন শারমিন জামান।