জরিপে উপার্জনে স্বামীর আয়ের তুলনায় পিছিয়ে আছে স্ত্রীরা
ধরাবাঁধা নিয়মের গণ্ডি যেন এখনো পেরোতে পারেনি আধুনিক সমাজ। সময়ের স্রোতে প্রথাগত ভাবনা গুলোতে বন্দি তারা। বৈষম্য নামক শব্দের যেন ইতি টানার জায়গা নেই। শিক্ষা থেকে কর্মস্থল আর উপার্জনেও বৈষম্যের রেশ কাটেনি বিংশশতাব্দীতে এসেও।
নতুন এক জরিপে দেখা গেছে স্ত্রীরা উপার্জনের দিক থেকে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ নারীই উপার্জনের ক্ষেত্রে স্বামীর চেয়ে কম উপার্জন করে থাকেন। ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল- এই চার দশকে বিশ্বের ৪৫ দেশে বিদ্যমান তথ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো পরিবারের ভেতরে স্বামী-স্ত্রীর মজুরিতে লিঙ্গ বৈষম্যের এই বৈশ্বিক গবেষণাটি করা হয়।
এই জরিপটি বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের সেন্টার ফর পাবলিক পলিসির দুই গবেষক অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথ ও অধ্যাপক দীপক মালগান করেছেন। তারা ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ২.৮৫ মিলিয়ন পরিবারের স্বামী-স্ত্রী থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে এই জরিপটি করেছেন। তথ্যগুলো অলাভজনক লুক্সেমবার্গ ইনকাম স্টাডি সংগ্রহ করেছিল।
অধ্যাপক স্বামীনাথ বলেন, প্রথাগত দারিদ্র্যতার ক্ষেত্রে পরিবারকে একটি একক হিসেবে দেখা হয়। একটি সাধারণ চিন্তা হলো পরিবারের মধ্যে আয় এক জায়গায় করা হয় এবং সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে তা বণ্টন করা হয়। কিন্তু পরিবারই হচ্ছে বৈষম্যের সবচেয়ে বড় জায়গা এবং আমরা সেটিই দেখাতে চেয়েছি।
প্রতিবেদনে পরিবারকে ‘ব্ল্যাক বক্স’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক স্বামীনাথ বলেন, আমরা ভেতরটায় চোখ রাখি না। আমরা যদি ভেতরটায় চোখ রাখতাম তাহলে ছবিটা অন্যরকমভাবে বদলে যেত।
কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য ভারত বেশ পরিচিতি। তবে সেখানে খুব বেশি নারী চাকরি করেন না এবং যারাই করেন তাদের অধিকাংশই পূর্ণকালীন চাকরি করেন না। যদিও স্বামীনাথ ও মালগান বৈশ্বিক চিত্রটা দেখাতে চেয়েছেন। তারা বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নর্ডিক দেশগুলোকে লিঙ্গ সমতার বাতিঘর মনে করা হয়।কিন্তু সেখানকার অবস্থা কেমন? সেখানে বাড়িতে কি সম্পদ ও কাজকে সমভাবে বণ্টন করা হয়?
তারা বিশ্বের দেশগুলোকে সামগ্রিক ও পরিবার এই জায়গাতে বৈষম্যের ভিত্তিতে স্থান দিয়েছেন। তাদের ফল অনুসারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব দেশের পরিবারেই বৈষম্য আছে, তা গরিব বা ধনী দেশই হোক না কেন।
মালগান বলেন, সম্প্রতি পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন, এমন একটি দেশও পাওয়া যায়নি হোক সেটা উন্নত কিংবা ধনী দেশ। যেখানে স্বামীর সমান সমান আয় স্ত্রী করেন। এমনকি নর্ডিক দেশগুলো যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে কম লিঙ্গ বৈষম্য, আমরা সবখানেই দেখেছি নারীর ভাগ ৫০ শতাংশের চেয়ে কম।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী নারীরা মোট কর্মঘণ্টার ৭৬.২ শতাংশ বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকে। যা পুরুষের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। আর এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশে এটি বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়ায়।
এই সবের মধ্যেও আশার কথা হলো ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল এই চার দশকে পরিবারের ভেতরের এই বৈষম্য ২০ শতাংশ কমেছে।
দিনকে দিন একটু হলেও নারীর জীবন বৈষম্যের হাতছানি পার করছে। এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছে সাফল্যের সাথে।