বাংলার প্রথম নারী ভ্রমণকারীর গল্প বললেন এলিজা
হরিপ্রভা তাকেদা, নাম শুনে খুব একটা পরিচিত কেউ মনে হচ্ছে না নিশ্চয়ই। হওয়ার কথাও নয়। কারণ ইতিহাস এই নারীর জীবনকে খুব একটা আলোকপাত করেনি বলা যায়। কিন্তু এমন একজন নারী যিনি ১০৮ বছর আগে জাপান ভ্রমণে গিয়েছিলেন তার গল্প আমাদের সামনে তুলে ধরলেন এই যুগের আরেক নারী ভ্রমণকারী।
এলিজা বিনতে এলাহি, ইতোমধ্যেই অনেকের কাছে পরিচিত মুখ। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এলিজা নির্মাণ করলেন হরিপ্রভা তাকেদার জীবনের উপর একটি ট্রাভেল ডকুমেন্টারি। যেখানে হরিপ্রভার জীবনীর উপর আলোকপাত করা হয়।
হরিপ্রভা ছিলেন মূলত বাঙালী ব্রাহ্মণ নারী। যিনি ১৯১২ সালে জাপানী নাগরিক উইমন তাকেদাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে স্বামীর সাথে জাপান ভ্রমণে যান। এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ১৯১৫ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মুনতাসির মামুন হরিপ্রভাকে বাংলার প্রথম আধুনিক নারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রকৃত অর্থে এত বছর আগে হরিপ্রভা নিজেকে আধুনিক নারী হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সেসময় একজন বাঙালী নারী হিসেবে স্বাধীন মানসিকতার পরিচয়ও দিয়েছেন৷ ১০৮ বছর আগে এদেশের সমাজ নারীদের জন্য কতটা রক্ষণশীল ছিল সে আন্দাজ আমাদের খানিকটা হলেও আছে। আর সে সমাজের হয়ে একজন জাপানি তরুণকে বিয়ে করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হরিপ্রভা। এমনকি তখন একজন বাঙালি তরুণী হয়ে তিনি পিছিয়ে পড়া নারীদের কল্যাণেও কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি রেডিওতে কাজ করেছেন, বিপ্লবী সুভাস চন্দ্র বোসের সাথে নানা কাজে যুক্ত ছিলেন।
১৯ শতকের শুরুর দিকে ঢাকার একজন নারীর এমনধারার কার্যক্রম তাকে বর্তমান নারীদের অনুপ্রেরণা হিসেবে উদাহরণ করতে পারে।
আর এমন একজন নারীকে নিজের দায় অনুভব থেকে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন এলিজা বিনতে এলাহি।
গত শনিবার ৯ অক্টোবর ঢাকার আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তনে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইতিহাসবিদ ও লেখক ড. মুনতাসির মামুন।
উক্ত আয়োজনে সকলেই এলিজার এমন অসাধারণ কাজের জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানান। মাত্র ২৬ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র অতবছর আগে জাপান বাংলাদেশের যে সেতুবন্ধনের পথ উন্মোচন করে গেছেন, সেই পথকে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের রূপ হিসেবে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এলিজা।