আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস আজ
প্রতিটি পরিবারেই ঘর আলো করে আগমন ঘটে কন্যাশিশুর। ছোট্ট মেয়েটির ফুটফুটে হাসি মুগ্ধ করে দেয় সবাইকে। আদরের সাথেই সে বড় হতে থাকে। ছোট্ট এই শিশুটিই ধাপে ধাপে কারো বোন, স্ত্রী, ননদ, মা, শাশুড়ি, খালা, ফুফু, দাদিতে পরিণত হয়। ছোট্ট এক শিশুর মধ্যেই সুপ্ত থাকে এতোগুলো সম্পর্ক পরিচালনার গুণাবলি। এই কন্যাদের দিন আজ।
আজ ১১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’। প্রতি বছরের মতো বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে মেয়ে শিশুদের এই দিবসটি। প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা’। তথ্যপ্রযুক্তিতে কন্যাশিশুদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘ডিজিটাল জেনারেশন, আওয়ার জেনারেশন’, অর্থাৎ ‘ডিজিটাল প্রজন্মই, আমাদের প্রজন্ম’।
পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করে থাকে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নারীদের শিক্ষার অধিকার, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এ দিবসের যাত্রা শুরু।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ (Because I Am a Girl) নামক আন্দোলনের মাধ্যমেই এই দিবসটির আবির্ভাব হয়েছিলো। এ আন্দোলনের মূল কর্মসূচি হলো ‘বিশ্বজুড়ে কন্যাশিশুর পরিপুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা’। কানাডার সহায়তায় এই সংস্থাটি এই আন্দোলনকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। কানাডাই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। এরপর ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১২ সালে জাতিসংঘের রেজুলেশনের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ গার্ল চাইল্ড ঘোষণা করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে শিশু অধিকার সপ্তাহ শুরু হয় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এরপর ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে কন্যাশিশুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ। আর বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ কন্যাশিশু রয়েছে। প্রান্তিক সমাজ কাঠামোয় তারা অধিকাংশই অবহেলিত। সেই সঙ্গে কন্যাশিশুরা মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও পুষ্টি-হীনতারও শিকার। জাতিসংঘের শিশু-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশে ১৮% মেয়ের ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হয় ৫২% কন্যাশিশুর। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির প্রায় দুইবছরে এ হার যেন জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।
এসব বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বেশ কিছু সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’ পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশে ৩০ সেপ্টেম্বর ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’ পালন করা হয়। ২০০০ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কন্যাশিশু দিবস পালনের আদেশ জারি করে। আদেশে বলা হয়, শিশু অধিকার সপ্তাহের মধ্যে একটি দিন অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে একটি দিনে কন্যাশিশু দিবস পালন করা হবে। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যাশিশু দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশে দুই দিবসই সমারোহের সাথে উদযাপন করা হয়।