Skip to content

১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন অগ্নিকন্যা লীলা নাগ!

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নারী – পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যার কোনো ফারাক খুব একটা চোখে পরবে না। কিন্তু সেই শুরুর দিকের কথা চিন্তা করুন তো।  তখনও কি নারী – পুরুষ উভয় শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর ছিলো ক্যাম্পাস? উত্তরটি হবে, অবশ্যই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার সূচনা হয় যে নারীর হাত ধরে তিনি হলেন লীলা নাগ। আজ তাঁর ১২১ তম জন্মদিন।  

গতশতকে জন্ম এই নারীর। দেশ নারীশিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আজ অনেকদূর এগোলেও তৎকালীন সময়ে যে নারীশিক্ষা নিয়ে ছিলোনা তেমন কোনো সচেতনতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তখন প্রথা ভেঙে এগিয়ে চলাও যে খুব একটা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিলো তা কিন্তু একদমই নয়। তবে প্রথা ভাঙার কাজটি বেশ শক্ত হাতেই পালন করেছেন লীলা নাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। 

 

লীলা নাগের জন্ম আসামের গোয়ালপাড়ায় । তাঁর পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ অবসর প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তাঁর পিতৃ-পরিবার ছিল তৎকালীন সিলেটের অন্যতম সংস্কৃত-মনা ও শিক্ষিত একটি পরিবার। লীলা নাগের  শিক্ষা জীবনের শুরু ঢাকার ইডেন স্কুল থেকে। এরপর ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে বি.এ পাশ করেন। তাঁর এই দুর্দান্ত ফলাফলের জন্য লাভ করেন পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক। এরপর তিনি পরিকল্পনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সমাজ যে তখনও অনেকটা পিছিয়ে। ছিলোনা সহশিক্ষার ব্যবস্থা।  

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ হার্টসের দেয়া বিশেষ অনুমতির কারণে ভর্তি হতে পারেন তিনি। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী। পড়াশোনায় তিনি যেমন দুর্দান্ত ছিলেন তেমনি অধিকার আদায়ে গলা উঁচু করতে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার।  

 

তিনি ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় এক নারী। বাংলার নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ বলা চলে এই নারীকে। একজন নারী হিসেবে তিনি উপলব্ধি করেছেন সমাজে নারী শিক্ষার গুরুত্ব। তাই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢাকার আরমানিটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির)। শুধু বাংলাদেশেই নয় কলকাতায়ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। এছাড়াও তিনি মহিলা সমাজের মুখপত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা বের করেন।

বিপ্লবী এই নারী ছিলেন  নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার অবদান নেহাত কম নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয় তাঁকে। ভারত বিভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান। ১৯৭০ সালের ১১জুন ভারতে এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন।

 

বর্তমানে দেশ নারী শিক্ষা কিংবা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যে মসৃণ পথে হাঁটছে তার পেছনে বিশাল এক অবদান রয়েছে লীলানাগের। তখনকার সময়ে তাঁর পাড়ি দেয়া সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ ধরেই এসেছে আজকের এ সফলতা। আজ ১২১ তম জন্মদিনে বাংলার এই অগ্নিকন্যার জন্য রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ