হাসনাহেনা ও সাপের প্রেম!
ফুল গাছে সাপ আসেনা কে বলেছে? এই দেখুন না কি সুন্দরভাবে হাসনাহেনা গাছে সাপ শুয়ে আছে। এরকম কথা কি শুনেছেন? যখন লিখছি তার কিছু বছর আগেই এমন সাক্ষী হয়েছি।
হাসনাহেনা একটি বিশেষ ফুল। হ্যাঁ বিশেষ বলেছি এর যথেষ্ট কারণ রয়েছে যদিও শিরোনামে অবশ্যই পড়ে এসেছেন কেন বিশেষ ফুল। গ্রাম কিংবা ছোট শহরগুলোতে হাসনাহেনা ফুল নিয়ে একটা রেওয়াজ আছে।হাসনাহেনা ফুল নাকি সাপকে আকর্ষণ করে! কেমন অবাক লাগছে নাহ? কোন কোন মানুষ রীতিমতো হট্টগোল সৃষ্টি করে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে। হাসনাহেনা ফুলের আশে পাশে সাপকে দেখা যায় এটা বিরল কোন ঘটনা নয়। তবে এই ভদ্রলোক গন্ধে এসেছে নাকি অন্য কারণে সেটাই তো আলোচ্য বিষয়।
লোক গল্পে আছে সাপ হাসনাহেনা বা সুগন্ধি ফুলের গন্ধে বিমোহিত হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। আসলে সাপের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ বা দুর্বল। হাসনাহেনা কিংবা কোনও সুগন্ধি ফুলের গন্ধে মোহিত হওয়ার মতো ঘ্রাণ শক্তি সাপেদের নেই।
সাপেদের এই ইন্দ্রিয় শক্তি নিয়েই আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে নানা লোক গল্প।এমন গল্পও হয়তো শুনেছেন বা কেউ কেউ নিজ চোখেও দেখেছেন যে, সুগন্ধি ফুলের গাছের তলায় সাপ শুয়ে আছে কথাটা সত্য । তাই বলে এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, ফুলের গন্ধেই আকৃষ্ট হয়ে সাপ সেখানে শুয়ে আছে।
বাস্তবতা হলো এসব সুগন্ধি ফুলের ভেতরে এক ধরনের মধু থাকে যা নানারকম কীট-পতঙ্গের প্রধান খাদ্য। আর এই কীট-পতঙ্গের জন্য এসব ফুল গাছে বা গাছের তলায় ছুটে আসে কিছু পতঙ্গ-ভুক্ত প্রাণী–যেমন, টিকটিকি, মাকড়সা, কুনোব্যাঙ ইত্যাদি। এই পতঙ্গ-ভুক্ত প্রাণীগুলো সাপেদেরও পছন্দের খাদ্য।
সাধারণত সাপ খাওয়া-দাওয়ার পরে বেশি নড়াচড়া করতে পারে না, তাই ফুল গাছের নিচেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে থাকে। ঠিক এই অবস্থায় চোখে পড়লে আমরা ভাবি, ফুলের গন্ধে মোহিত হয়েই বুঝি সাপ গাছ তলায় এসেছে। খাদ্য শৃঙ্খলের এই অসাধারণ নিয়মটিই আমাদের সমাজে এক লোক গল্পের সৃষ্টি করেছে।
এখন আমাদের সন্ধানী মন এটা ভেবে খুশি হলো যে কেন সাপ ফুলের কাছে ফিরে আসে।তাই নিজ চোখ কান খোলা রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া শ্রেয় এবং গদ বাধা গল্প থেকে আসল বিজ্ঞান খুঁজে নেওয়াই মূলমন্ত্র।চোখ কান খোলা রেখে হাসনাহেনা গাছ তলায় যাবেন।