ব্যায়ামে যখন পিরিয়ডিক বাধা !
আমাদের এই রক্ষণশীল সমাজে পিরিয়ডকে একটি বড়সড় রোগই ভাবা হয়। মেয়েদেরকে সাধারণত এক ঘরে করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় । আমরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে অনেক সামাজিক ট্যাবু ভেঙে দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু এখনো কিছু নিয়মের বেড়াজালে আটকে আছে মেয়েরা। যেমন, অনেকেই মনে করেন পিরিয়ডের সময় একেবারেই ব্যায়াম করা যাবেনা। কিন্তু পিরিয়ডের এই সময়টায় ব্যায়াম করা যাবে না এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।
স্বাস্থ্য-সচেতন মেয়েদের মনেও একটি প্রশ্ন প্রায়ই আসে যে, পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করা কি উচিত? যদি আপনার শরীর সায় না দেয় সেক্ষেত্রে ব্যায়াম না করাই উত্তম। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিরিয়ডের ওই সময়টায় ব্যায়াম করা যাবে না এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। পিরিয়ডের দিনগুলো অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন রকম থাকে। হরমোনের কারণে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে ৷ এই সময় মেয়েদের শরীর অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি দুর্বল থাকে।
অনেকের জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে, তলপেট স্ফীত হয়! ব্যথা করে ৷ এমনকি বমিও হয়। কিছু কাজ রয়েছে যা এই সময়ে করলে শরীরের অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে। এ সময়ে করা যাবে না এমন কোন কাজ যা শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে নিয়মিত ব্যায়াম পিরিয়ডের আগে এবং পিরিয়ডের সময়কালীন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যথা ছাড়াও পিরিয়ডের সময় হরমোন-জনিত কারণে, অকারণে মন খারাপ থাকে বা ডিপ্রেশন তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে অ্যারোবিক্স বেশ সাহায্য করে। অ্যারোবিক্সের কিছু উদাহরণ হচ্ছে- অল্প হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, দৌড়ানো, ইত্যাদি। অল্প কার্ডিয়োও এবং যোগ ব্যায়াম ক্ষতি করবে না শরীরের।
অল্প ওজনের ডাম্বেল দিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন, যা এক হাতের সাহায্যে সহজেই তোলা সম্ভব। যে কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে একটি ডাম্বেলের সাহায্যেই ধীরে ধীরে হাত, কোমর ও পিঠের ব্যায়াম করতে পারেন। পিরিয়ডের সময়েও খুব স্বাভাবিক নিয়মে সাঁতার কাটা সম্ভব। এ সময় সাঁতার কাটা সবচেয়ে বেশি উপকারী শরীরচর্চা। এতে শরীর ভালো থাকবে ও পিরিয়ড-কালীন সমস্যা কমবে।
এই সময় কিছু কাজ করা উচিত নয়। যেমন , অনেকেরই পেটে ভীষণ ব্যথা থাকে বলে পেটে চাপ দিয়ে শুয়ে থাকেন। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে তা পেটে এমনভাবে চাপ ফেলে যে সেটা মোটেও ভালো নয়। এ ছাড়া এই সময় উপুড় হয়ে শুলে হার্ট রেটে তারতম্য হয়, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ হয় না বলে মাথা ঝিমঝিম বা ব্যথা করে। নারীদের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ থাকে তাদের পেটে। যেমন জরায়ু বা ডিম্বাশয়। তাই খুব বেশি ভারী জিনিস টেনে তোলা নারীদের জন্য ভালো নয়। আর পিরিয়ডের সময় তো একেবারেই নয়।
পিরিয়ডের সময় ভারী কোনো ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। পিরিয়ডের সময় করার জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম রয়েছে, সেগুলো করতে পারেন। যোগব্যায়ামের কিছু আসন পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খুবই কাজে দেয়। প্রস্রাব পেলে তা আটকে রাখার বদঅভ্যাসটা অনেকেরই আছে। প্রস্রাব পেলে তা আটকে রাখা কখনোই উচিত নয়। এটি কিডনির ওপরে ভয়াবহ রকমের চাপ ফেলে। বারবার প্যাড পাল্টানোর ভয়ে অনেকেই পিরিয়ডের সময় প্রস্রাব চেপে রাখেন। এটি খুবই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এই সময়ে একাজ তলপেটের ওপর চাপ ফেলে এবং ব্যথা দীর্ঘসময় থাকে।
পিরিয়ডের সময় রাগ, বিরক্তি, জেদ তুলনামূলক-ভাবে বেড়ে যায়। রেগে গিয়ে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করা উচিত নয় ৷ এর ফল হবে ভয়ানক। এটি সরাসরি তলপেটে চাপ ফেলে। কাউকে ডাকতে গিয়েও জোরে চিৎকার করা ঠিক নয় ৷ চিৎকার করতে শরীরের যেসব পেশীর ওপর জোর দিতে হয় তার মধ্যে পেটের পেশীও আছে। ঘন ঘন প্রস্রাবের ভয়ে অনেকেই এ সময় জল কম খান। অথচ পিরিয়ডের সময়েই বেশি করে খাওয়া দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান শরীরকে দুর্বল হবার হাত থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া রক্তের তরল্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যেও এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়া উচিত।
নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেহেতু অন্যর হাতে নয় তাই অন্য মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া দরকার । পাশাপাশি কিছু বিষয় মাথায় রাখা গেলে খুব সহজেই সুস্থতার সাথে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।