নিঃসন্দেহে খেতে পারেন ডার্ক চকলেট
বাচ্চা থেকে বুড়ো চকলেট পছন্দ করে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চকলেট বার থেকে শুরু করে চকলেট কেক, চকলেট মিল্ক শেক, চকলেট ব্রাউনি, চকলেট পেস্ট্রি নাম শুনলেই সকলের জিভে জল চলে আসে। চকলেট শুধু রসনার তৃপ্তি আনে তাই নয়, বরং ডার্ক চকলেটের আছে নানা উপকারিতা।
ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে সক্রিয় জৈব উপাদান পলিফেনলস, ফ্ল্যাভানল রয়েছে, যা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো ফলের তুলনায় ডার্ক চকলেটে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান অনেক বেশি। কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা মানুষকে উদ্দীপিত করে তোলে।
ডার্ক চকলেটের উপকারিতা:
পুষ্টিকর:
কোকোয়া সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট পুষ্টিগুণে ভরপুর। এরমধ্যে রয়েছে ফাইবার ও খনিজ পদার্থ। প্রতি ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেট বারে ৭০-৮৫% কোকোয়ার পাশাপাশি থাকে লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও সেলেনিয়াম। তাছাড়া ডার্ক চকলেটের ফ্যাটি অ্যাসিড পুষ্টিকর, যা অলিভ অয়েলেও পাওয়া যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
ডার্ক চকলেট শরীর থেকে অপকারী চর্বি বের করে দেয় বলে হৃৎপিণ্ড ঠিকমতো কাজ করে। দিনে পাঁচবার ডার্ক চকলেট খেলে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে ৫৭ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে মিল্ক চকোলেটের চেয়ে ডার্ক চকোলেট বেশি উপকারী। তবে যারা হৃদরোগে ইতোমধ্যে ভুগছেন তাদের চকোলেট না খাওয়াই ভালো।
ক্যান্সারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ:
ডার্ক চকলেট আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টিকারী মুক্ত বিচরণকারী কণাগুলো ধ্বংস করে এবং আমাদের দেহে ক্যান্সারসহ নানা রোগ থেকে রক্ষা করে। আমাদের দেহের রোগ সৃষ্টিকারি এইসব ফ্রি রেডিক্যালস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এ্যালঝেইমার ইত্যাদি রোগের কারণ।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:
নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে। গবেষণায় দেখা গেছে কোকো পাউডারের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ উপাদানগুলো এবং পলিফেনোল শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল উৎপন্ন করতে সহায়তা করে। যার ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় না। একইভাবে এটা সুগারও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে চিনিযুক্ত চকোলেট আবার বেশি খেলেও বিপদ বাড়বে। তাই পরিমাণে টানতে হবে লাগাম। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দু-তিনটা খাওয়াই যায়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট:
ডার্ক চকলেটে প্রচুর জৈব উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে। এতে পলিফেনলস ও ফ্লেভানলও থাকে। এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে এবং ক্যানসার রোধে ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে গ্রিন টির চেয়েও বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনও ফলের তুলনায় ডার্ক চকলেটে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান বেশি।
রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ:
ডার্ক চকলেটে কোকোয়া থাকায় এটি রক্ত চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার কারণে রক্তচাপও স্বাভাবিক থাকে। এটি শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদনে উদ্দীপনা বা উৎসাহিত করে যার ফলে রক্তনালীর রক্তপ্রবাহ কে বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তচাপের সমস্যা দূর করে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও বিষণ্ণতা কমায়:
কোকোয়া বীজে থাকা ফ্লেভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা মানুষকে উদ্দীপিত করে তোলে। ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সুস্থ ব্যক্তি যারা তিনমাস উচ্চ ফ্লেভানলযুক্ত কোকোয়া পানীয় পান করেছেন, তাদের স্মৃতিশক্তি বেড়েছে। চকোলেটে থাকা ট্রিপটফেন উপাদানটি বিষণ্নতা রোধে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন বাড়িয়ে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। দিনে ৪০ গ্রাম ডার্ক চকোলেট খেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্ট্রেস হরমোনও কমে যায়।
ত্বকের যত্নে:
ডাক চকলেটে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, কপার সহ অনেক উপাদান আছে। এসব উপাদান আমাদের দেহে কোলাজেন নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোজেন আমাদের দেহের ত্বক মোলায়েম ও স্বাস্থ্যবান রাখে। ডার্ক চকলেটে থাকা ক্যালসিয়াম থাকে এবং এই ক্যালসিয়াম ত্বকের ক্ষয়রোধ করে ও নতুন ত্বক তৈরিতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডার্ক চকলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
তবে, এত সব উপকারী গুণাগুণ আছে বলেই যত খুশি চকলেট খাওয়া যাবে এমনটা নয়। পরিমিত মাত্রায় চকলেট খাওয়া ভালো। সপ্তাহে ভালো মানের ডার্ক চকলেট খেলেও বেশ উপকারিতা পাবেন।