আমেরিকার বিমানে আফগান নারীর সন্তান প্রসব
আফগানিস্তানে তালেবানের দখল সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে আফগানিস্তানের অবস্থা অনেকটাই বদলে যাবে। ধর্মের নামে অরাজকতার শিকার হতে হবে অনেককেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন অন্য দেশে।
কাবুল পুরোপুরি দখল করার আগ থেকেই সারা দেশের জনগণ দেশ ছেড়ে যাবার জন্য দিশেহারার মতো ছুটছে। কাবুল দখল করার পর হাজার হাজার আফগান নিজের দেশ ছাড়ছেন। উজবেকস্তান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ আফগানদের দেশ ত্যাগে সাহায্য করছে ও নিজ দেশে আশ্রয় দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধারকারী একটি বিমানে এক আফগান নারী সন্তান প্রসব করেছেন।
তালেবান শাসন থেকে রক্ষার জন্য দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন অন্তঃস্বত্ত্বা ওই নারী। তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এর সবচেয়ে বেশি শিকার হবে নারীরা। শিক্ষা, স্বাধীনতা, প্রতিষ্ঠা সবকিছুর জলাঞ্জলি দিয়ে পরাধীন হয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে বেঁচে থাকতে হবে নারীদের। এজন্যই হয়তো এই অবস্থায়ও দেশ ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
শনিবার পরিবার নিয়ে কাবুল এয়ারপোর্টে গিয়ে তিনি উদ্ধারকারী একটি প্লেনে ওঠেন। তাদের যাওয়ার কথা জার্মানির রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে। আফগানিস্তান থেকে নিজেদের লোকজন সরিয়ে নিতে র্যামস্টেইন এয়ার বেজ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্লেনটি আকাশে উড়তেই ভয়ঙ্কর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় তার। এরপর জার্মানির র্যামস্টেইন এয়ার বেজে প্লেনটি অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী সন্তান প্রসব করেন।
বিমানটি যখন ২৮ হাজার ফুট উচ্চতায় সেই সময়ে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় ওই নারীর। প্লেনের মধ্যে বায়ুচাপ কম থাকায় শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। যদিও সেই বায়ুচাপ কমিয়ে আনা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ক্রমশ বেদনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে বিমানটির কমান্ডার বিমানের উচ্চতা কমিয়ে আনেন, যাতে এর ভিতরে বাতাসের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাতে ওই মায়ের জীবন রক্ষা হয়। বিমান অবতরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চিকিৎসকরা সন্তান প্রসবে সহায়তা করেন ওই মাকে। মা ও নবজাতক সুস্থ আছে।
বিমানে জন্ম নেওয়া ওই শিশুর জাতীয়তা কি হবে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা ঝড়। কেউ কেউ বলছেন, শিশুটি যেহেতু মার্কিন পতাকাবাহী এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করা সামরিক বিমানে জন্মগ্রহণ করেছে, সে জন্য তার মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত। আরেক পক্ষ বলছেন, যেহেতু বিমানটি জার্মানিতে অবতরণের পর শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তাই জার্মান নাগরিকত্বই তার প্রাপ্য।
সাধারণত জুস স্যাংগুইনিস অনুযায়ী শিশুর নাগরিকত্ব নির্ধারিত হয়ে থাকে তার মায়ের এবং বাবার নাগরিকত্ব অনুযায়ী। কিন্তু কোন কোন দেশ তার সীমানার মধ্যে শিশুর জন্ম হলে তাকে নাগরিকত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ম আছে। তবে মার্কিন ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যানুয়াল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানার বাইরে যে কোন স্থান যেমন: দূতাবাস, কনস্যুলেট, সামরিক বিমান কিংবা ঘাঁটি ইত্যাদিতে জন্ম নিলেও কোন শিশু মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকারী হবে না, যদি না তার পিতামাতার অন্তত একজনের মার্কিন নাগরিকত্ব থাকে। তাই এক্ষেত্রে শিশুটির নাগরিকত্ব আফগানই হওয়া উচিত।