চার মশলার গুণাগুণ
মশলা তো অনেক রয়েছে তাহলে শুধু চার মশলার গুণাগুণ কেন তাই ভাবছেন তো? রান্নায় ব্যবহৃত মশলার মধ্যে দারচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ ও এলাচ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই বলা হয়েছে চার মশলার গুণাগুণ।
তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি করতে এবং তরকারির সুন্দর গন্ধ ছড়ানোর জন্য তরকারি তে মশলার ব্যবহার করা হয়। রান্নার শেষে একটু মশলা গুড়া দিয়ে না দিলে রান্নার ফিনিশিং এ আসে না। বাঙালি রান্নায় মশলা তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি করে বলেই অনেকের কাছে বাঙালি রান্না অনেক পছন্দের।
রান্নায় ব্যবহৃত মশলার মধ্যে প্রয়োজনীয় কিছু মশলা সম্পর্কে আজ জানাবো।
তেজপাতা
এটি এক প্রকারের উদ্ভিদ, এর পাতা মশলা হিসেবে কাজ করে। তেজপাতার বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum tamala। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন ও ভুটানে তেজপাতার গাছ পাওয়া যায়। তেজপাতার বিটা-কাইরোফিলিন, লিনালল ও ইউজিনল উপাদানের জন্য এটি রান্নায় সুগন্ধি ছড়ায়। তেজপাতা মাড়ির ক্ষত এবং অরুচি দূর করে। ঘামাচি সারাতে তেজপাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তেজপাতার বাকল থেকে সুগন্ধি তেল পাওয়া যায়, যা সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
দারচিনি
এটি একটি মশলা বৃক্ষের নাম। দেখতে কিছুটা তেজপাতা গাছের মতো হলেও দারচিনি গাছের চামড়া কেই মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দারচিনির বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomus Zeylanicum। দারচিনির আদি-নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি অনেক দেশেই এই মশলার চাষ করা হয়। দারচিনির বাকলে 'সিনামাল ডিহাইড' থাকায় দারচিনি ঘ্রাণ-যুক্ত হয়। এছাড়া দারচিনি পাতায় থাকে ইউজিনল। দারচিনির সুগন্ধি তেল ও পাওয়া যায়। হৃদরোগ প্রতিরোধে, ত্বকের যত্ন, স্মৃতি শক্তি বাড়াতে, পেট ব্যথার উপশম হিসেবে দারচিনি ব্যবহার করা হয়।
লবঙ্গ
লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়িকে শুকিয়ে লবঙ্গ মশলা তৈরি করা হয়। লবঙ্গের আদি বাস ইন্দোনেশিয়া তে হলেও বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তেও লবঙ্গের চাষ করা হয়। ইউজিনল থাকায় লবঙ্গ সুগন্ধি যুক্ত হয়। ঠাণ্ডা, সর্দি-কাঁসি তে লবঙ্গ বেশ উপকারী। এছাড়া দাঁতের সমস্যা দূরীকরণে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় লবঙ্গ বেশ উপকারী।
এলাচ
যত ধরনের মশলা ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে এলাচকে বলা হয় মশলার রাণী। এলাচ কালো ও সবুজ দুই ধরনের হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় উদ্ভিদ। এলাচ বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল মশলা, যা কেবলমাত্র ভ্যানিলা ও জাফরান দ্বারা ওজন প্রতি মূল্যে পিছনে রয়েছে। সুগন্ধ যুক্ত হওয়ায় মশলাটি তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, শ্বাসকষ্ট রোধে, হৃদযন্ত্রে, ক্ষুধা বৃদ্ধি ও হজমে সাহায্য করতে, দাঁত ও মাড়ি শক্ত করতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধে এলাচ খুবই উপকারী।
শুধুমাত্র তরকারির স্বাদ বৃদ্ধি করতে নয় সেই সাথে নানান অসুখ থেকে মুক্তি পেতেও এই মশলা গুলো খাওয়া উচিত। লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। যা শরীরের নানান রোগ প্রতিরোধ ভূমিকা রাখে।