ইলিশ চেনার উপায়!
মাছের রাজা বলা হয়ে থাকে ইলিশ মাছকে। তবে মাছটি মৌসুমভিত্তিক হওয়ার কারণে সব সময়ে পাওয়া যায় নাহ ।এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ইলিশ মাছ বুঝিয়ে দেয়।
ভালো স্বাদের ইলিশ মাছ চিনতে পারা সহজ নয়। অভিজ্ঞ না হলে ইলিশ কিনতে গিয়ে ঠকতে হতে পারে। সরল ক্রেতা হতে পারেন বিক্রেতার প্রতারণার শিকার। এমন নজির কম নয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ইলিশ কেনার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ এর স্বাদ। অথচ এত স্বাদের ইলিশেও আছে ধোঁকাবাজি।
যখন প্রকৃত ইলিশ বাজারে থাকে না, তখন বাজার ছেয়ে যায় নকল ইলিশে। এর মধ্যে সার্ডিন, যাত্রিক, টাকিয়া, চৌক্কা, পাসনা, খায়রা, সাগর চাপিলা উল্লেখযোগ্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা সার্ডিন বা চন্দনা মাছকেই ইলিশ বলে বাজারে ছাড়ে। সার্ডিন সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, এক সময় মেডিটারেয়ান দ্বীপ সার্ডিনিয়ার চারদিকে এই মাছের আধিক্য ছিল।
তাই মাছটি ‘সার্ডিন’ নামে পরিচিতি পায়। সমুদ্র পথে আমদানি হয় এই মাছ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকে। সার্ডিন মাছটি দেখতে যেহেতু ইলিশের মত, সে কারণে সংকটের মৌসুমে ইলিশ বাজারে প্রবেশ করে সার্ডিন। চালিয়ে দেয়া হয় ইলিশ বলে। প্রকৃত ইলিশ না চেনার কারণে অনেকে এই ধোঁকাবাজির শিকার হন। অসাধু ব্যবসায়ীরা টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, উখিয়া ও কক্সবাজার উপকূল থেকে এই মাছ কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। রাজধানীর অন্যতম প্রধান বাজার কারওয়ান বাজারেও দেদার বিক্রি হয় সার্ডিন মাছ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এসব নকল ইলিশের হদিস মিলেছে। গবেষণায় জানা যায়, চাপিলা, সার্ডিন ও চৌক্কা মাছ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ইলিশ নামে। সার্ডিন আকারে অনেকটা জাটকার মতো। আর চৌক্কা বেশ বড় হয় লম্বায় অনেকটা ইলিশের কাছাকাছি। তবে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই চৌক্কা এবং ইলিশের পার্থক্য বোঝা যাবে। সাগরে সারা বছরই কমবেশি সার্ডিন ও চৌক্কা ধরা পড়ে। বিদেশ থেকেও আমদানি হয় এসব মাছ। রাজধানীর পাইকারী মাছের বাজার থেকে রাতের আঁধারে এই মাছ চলে যায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। তারা বড় বড় পাতিলে এসব মাছ অলিগলি ঘুরে বিক্রি করেন।
এ ছাড়া মাওয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটের পাশাপাশি ইলিশের জন্য বিখ্যাত চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায়ও এসব মাছ যাত্রীদের কাছে কম দামে বিক্রি করা হয়। ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ইলিশের মতো দেখতে হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। এগুলো ইলিশের চেয়ে চওড়ায় কম এবং চোখের আকার বড়। চৌক্কার মাথা লম্বাটে ও সুঁচালো। সার্ডিনের মাথা বড় ও সামনের অংশ ভোঁতা। এসব মাছে ইলিশের গন্ধ নেই।’
সার্ডিনের দেহ পার্শ্বীয়ভাবে পুরু এবং পিঠের দিকের চেয়ে পেটের দিক অপেক্ষাকৃত উত্তল ও চ্যাপ্টা। অন্যদিকে ইলিশের পিঠ ও পেটের দিক প্রায় সমভাবে উত্তল। সার্ডিনের দৈর্ঘ্য সাত সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ইলিশ ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সার্ডিনের পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনার ঘোলাটে। ইলিশের পৃষ্ঠীয় পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনার অনেকটা ফ্যাকাশে।
ইলিশ শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এটি উপকারী মাছও বটে। ইলিশে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড যা বুদ্ধি বিকাশে খুবই উপকারী। ইলিশ মাছ কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রজননতন্ত্র গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও রয়েছে ইলিশের অবদান। ইলিশে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। এই মাছ খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয়। ইলিশ খেলে রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আর্থারাইটিস কম হয়। একইসঙ্গে ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারও কম হয়।
কিছু বিষয় মাথায় রাখলে ইলিশ নিয়ে কোন ধোঁকা খেতে হবে নাহ। তবে মাছ ব্যবসায়ীরা চতুরতার সাথে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চাইবেই। সুতরাং ইলিশ যদি খেতেই হয় চিনে সঠিক মাছটি খাওয়া উচিত।