আইসল্যান্ড বিশ্বের সৌন্দর্যের অনন্য উদাহরণ
পৃথিবীর শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছোট একটি দেশ আইসল্যান্ড। যেখানে ভূমিকম্প খুব সাধারণ একটু ব্যাপার। দেশটির তলদেশ আগ্নেয়গিরিতে পূর্ণ। নাম শুনে মনে হয় আইসল্যান্ড বরফে ঘেরা শীত প্রধান একটি দেশ। কিন্তু বাস্তবে ততটা ঠাণ্ডা নয়, বরং মাঝে মাঝে তাপমাত্রা বজায় থাকে সেখানে। দেশটিতে একদিকে রয়েছে প্রায় এক হাজার দুইশো টির সমান বিশাল হিমবাহ, আবার রয়েছে ১৩০ টির মতো আগ্নেয়গিরি যার ৩০ টি এখনো সক্রিয়। গড়ে সাড়ে চার বছর পর পর আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে দেশটিতে আর এ জন্যই আইসল্যান্ডে ভূমিকম্প খুব সাধারণ একটি বিষয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশটির আয়তন মাত্র ৩৯ হাজার বর্গমাইল। জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৩২ হাজার যার অর্ধেকের বেশি রাজধানী রেইকিয়াভিক এর আশেপাশের এলাকায়।
রেইকিয়াভিক শহরে রয়েছে বিশেষ লিঙ্গ জাদুঘর। যেখানে মানুষ সহ প্রায় ২০০ টি স্তন্যপায়ী প্রাণীর লিঙ্গ রয়েছে। দেশটি তিমি মাছের প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত। অর্থনীতির একটি বড়ো আয় এই প্রদর্শনী থেকেই আসে। আইসল্যান্ডের তিন চতুর্থাংশ রুক্ষ হওয়ায় কোন বনাঞ্চল নেই। তবুও দেশটির প্রকৃতি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সেই সাথে মুগ্ধ করবে তাদের পরিচ্ছন্নতা আইসল্যান্ডে বেড়াতে এসে যদি পিপাসা পায় আর যদি সাথে পানি না থাকে তবে নির্দ্বিধায় কোন নদী বা জলাশয়ের পানি পান করা যায়। এখানকার পানি এতোটাই পরিষ্কার যে কোন বিশুদ্ধ করণের প্রয়োজনই পড়ে না। আইসল্যান্ডে আপনি কোন মশা মাড়তে পারবেন না কারণ পরিচ্ছন্নতা এতোটাই বেশি যে, এখানে মশার অস্তিত্ব ও নেই এমনকি কোন ক্ষতিকারক পোকা মাকড় ও নেই এই দেশে। আইসল্যান্ডে রয়েছে প্রাকৃতিক গিজার যা প্রয়োজন অনুসারে ঠাণ্ডা পানিকে গরম করে তোলে। এ দেশটিতে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৭৩ শতাংশই জলবিদ্যুৎ। দেশটিতে অপরাধ প্রবণতা খুবই কম। বড় বড় অপরাধ প্রায় অস্তিত্বহীন। তাই পুলিশের বন্দুক ব্যাবহার করার প্রয়োজন হয় না। এতোটাই শান্তিপ্রিয় যে নিজেদের কোন সামরিক বাহিনী পর্যন্ত নেই তাদের।
আইসল্যান্ডের জাতীয় খেলা ভলিবল। তবে ফুটবলেও তাদের উন্নতি চোখে পরার মতো। ২০১৬ ইউরোতে অভিষেকেই শেষ আটে উঠে রেকর্ড গড়েছিল দেশটি। এর পরের বছরই কোসাভাকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে বিশ্বকাপ। ১০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে জনসংখ্যা বিবেচনায় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ খেলার ইতিহাস তৈরি করে আইসল্যান্ড। প্রায় সকল পরিবারই পশু পালন করে থাকেন এখানে। এমনকি সেখানে মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। তবে সাপ কচ্ছপ ও টিকটিকি জাতীয় সরীসৃপ পোষার অনুমতি নেই সেখানে। এই দেশে কোন রেলযোগাযোগ নেই।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের জাতীয় খাদ্য পচে যাওয়া হাঙ্গর। তবে নাগরিকদের অন্যতম প্রিয় খাদ্য হটডগ যা রেষ্টুরেন্ট, বাস স্টপ, গ্যাস স্টেশনসহ শহরের সর্বত্র পাওযা যায়। আইসল্যান্ড বাসীদের নামকরণ করার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। সাধারণ বাবার নামের শেষ অংশ ছেলে বা মেয়ের নামের শেষ অংশে যুক্ত হয়। কিন্তু আইসল্যান্ডে যুক্ত হয় নামের প্রথম অংশ। এই দেশের লোকজন আইসক্রিম খেতে খুব ভালোবাসেন। এমনকি তীব্র শীতেও তারা আইসক্রিম খায়। আইসল্যান্ড এমনই একটি দেশ যেখানে পৃথিবীর সবথেকে বেশি বই এবং পত্রিকা পঠিত হয়। এছাড়া দেশটির প্রায় ১০ ভাগ মানুষ জীবনকালে একবারের জন্য হলেও বই লেখে। সুখী মানুষের সূচকে তাদের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। খুবই শান্তি প্রিয় হলেও এরা ইউরোপের সবচেয়ে বেশি কর্মক্ষম জাতি যারা সপ্তাহে ৪৩.৫ ঘণ্টা কাজ করে।