বিস্ময়ের স্যামসাং সিটি!
একটি কোম্পানি যারা কিনা সূচ থেকে শুরু করে ট্যাংকার অবধি তৈরি করে। বলা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় অর্ধেক জিডিপি স্যামসাং কোম্পানিটি এই দিয়ে থাকে। সারা বিশ্বজুড়ে কোম্পানিটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোম্পানিটির রয়েছে সুবিশাল দক্ষ জনশক্তি। স্যামসাং পুরোপুরি চলমান রাখার জন্য এদের নিজেদের এই একটি শহর রয়েছে। অবাক করা এ শহর পুরোই বৈচিত্র্যময়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে দাড়িয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট সেন্টারগুলোর একটি স্যামসাং ডিজিটাল সিটি। এই সিটিতেই চলে গ্যালাক্সি সিরিজের বিকাশ ও নিরীক্ষণের কাজ। পাশাপাশি, অসংখ্য দুর্দান্ত সব গ্যাজেটের কনসেপ্ট বাস্তবায়নের কাজও চলে এখানে। প্রথম দেয়াল টেলিভিশনের নকশাও আঁকা হয়েছিল এখানেই।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে স্যামসাং এর আড়াই লাখ মেধাবী কর্মীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে অসাধারণ এই প্রাঙ্গণটি। ডিজিটাল সিটি তৈরিতে স্যামসাং এর খরচ হয়েছিল প্রায় ১শ’ কোটি ডলার।
৩৯০ একর নিয়ে গঠিত অফিসটিতে আছে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী, চারটি ল্যান্ডমার্ক অফিস টাওয়ার, যার একেকটি উচ্চতায় ৩৮ তলা পর্যন্ত, ১৩১টি ছোট ছোট ভবন, সঙ্গে আরো অনেক গবেষণাগার, অফিস, বিনোদন কেন্দ্র এবং সাময়িক গবেষকদের থাকার জন্য অতিথি ভবন।
ক্যাম্পাসটিতে একটি জায়গা আছে যার নাম ‘স্যামসাং ফাইভজি সিটি।’ মূলত একটি আউটডোর পার্ক, যেখানে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামসমূহ পরীক্ষা করে। এগুলোই পরবর্তীতে সরবরাহ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।
ক্যাম্পাসটি কিছু অদ্ভুত এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত, যেমন মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট, যেখানে স্মার্টফোন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। এমআইএমওতে হওয়া পরীক্ষাগুলো নিয়ে স্যামসাং বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখে। ফিউচারিস্টিক এ জায়গাটি দেখতে অনেকটাই স্পেসশিপের ককপিটের মতো।
গবেষণা ও উন্নয়নে নিয়োজিত আছে প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক জনশক্তির প্রায় ২০ শতাংশ ৬৫ হাজারেরও বেশি। আরঅ্যান্ডডি ক্যাম্পাসে একটি বহুতল পাঠাগার আছে, যেখানে অসংখ্য বই এবং ম্যাগাজিনের সান্নিধ্যে ডিজাইনারগণ এবং অন্যান্য কর্মীরা তাদের আইডিয়াগুলো নিয়ে সুচিন্তিত অনুশীলন করতে পারেন।
ডিজিটাল সিটিতে আরো আছে একটি সাউন্ড ল্যাব। এতে রয়েছে বিভিন্ন সংগীত সরঞ্জাম এবং ভয়েস বুথ যেখানে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিক্সবি’র কণ্ঠ রেকর্ড করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির অসংখ্য গৃহস্থালি সরঞ্জামের শব্দগুলোও তৈরি করা হয় এখানেই।
বিস্তীর্ণ এ ক্যাম্পাসে রয়েছে ৪,১০০ আসনের একটি ক্যাফেটিরিয়া, যেখানে কর্মীরা খেতে পারেন বিনামূল্যে। প্রতিদিন এতে প্রায় ৯২টি ভিন্ন ভিন্ন মেন্যুর ৭২,০০০ জনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও রয়েছে ডানকিন ডোনাটস-এর মতো আন্তর্জাতিক খাদ্য ও পানীয় আউটলেট।
প্রতি সপ্তাহেই ডিজিটাল সিটিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে কনসার্ট, ফ্যাশন শো এবং টকশো। কর্মীদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে ৬৯০টি কালচারাল ক্লাব, যার মধ্যে রয়েছে কোরিয়ান লোকচিত্র থেকে শুরু করে প্যারাগ্লাইডিং এবং রান্নার ক্লাব। যেকোনো ফ্যামিলি ডে’তে সম্পূর্ণ স্যামসাং ডিজিটাল সিটি যেন বাসিন্দাদের জন্য একটি থিম পার্কে রূপান্তরিত হয়। এমনকি গো কার্টও আছে ওখানে।
হেডকোয়ার্টারটিতে আছে ৪৯০টি স্পোর্টস ক্লাব, ১০টি বাস্কেটবল কোর্ট, ৪টি ব্যাডমিন্টোন কোর্ট, ৩টি ফুটবল মাঠ, ২টি বেসবল মাঠ, ১টি ক্লাইম্বিং ওয়াল এবং একটি অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুল। প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে এর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুবিধাসমূহ প্রদান করে। ডিজিটাল সিটিতে আরো আছে ইনোভেশন মিউজিয়াম। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও এই মিউজিয়ামটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মিউজিয়ামে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
ছোট একটি শহর হলেও স্যামসাং সিটিতে একটি দেশের সমতুল্য সকল সুবিধা রয়েছে।সাধারণত জায়েন্ট কোম্পানিগুলোর সদর দপ্তর গুলো বিস্তর জায়গা নিয়ে গঠন করা হয়।আশ্চর্য এসকল প্রতিষ্ঠান গুলোর ভিতরে রয়েছে আধুনিক সমাজ গঠনে যাহ কিছু দরকার তার সবকিছুই।