সমালোচনাই তার কাছে অনুপ্রেরণা: দ্রুততম মানবী
অলিম্পিক হল একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করে। একজন অ্যাথলেটের স্বপ্ন থাকে অলিম্পিকে অংশ নেয়ার। অলিম্পিকের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে স্প্রিন্ট।
বেশ কয়টি স্প্রিন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে অলিম্পিকে। এর মধ্যে অন্যতম হল ১০০ মিটার স্পিন্ট। দ্রুততম মানব-মানবী নির্ধারিত হয় এই ইভেন্টের মাধ্যমেই। অনেকেরই আকর্ষণ থাকে বিশ্বের দ্রুততম মানব- মানবী কে হয় তা নিয়ে। গতকাল টোকিও অলিম্পিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে মেয়েদের ১০০ মিটার স্পিন্ট। সেখানে রেকর্ড গড়েই বিশ্বের দ্রুততম মানবীর শিরোপা জিতে নিলেন এলেইন থম্পসন হেরাহ। ৩৩ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে দ্রুততম মানবীর খেতাব অর্জন করেছেন জ্যামাইকার এই নারী। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ-জয়নার ১০ দশমিক ৬২ সেকেন্ড সময় স্বর্ণ জিতেছিলেন। এতদিন এটাই ছিল অলিম্পিকের সেরা। এবার মাত্র ০ দশমিক ১ সেকেন্ড কম সময়ে অলিম্পিকে নতুন রেকর্ড তৈরি করলেন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হেরাহ।
তিনটি স্বর্ণ জয়ের আশা নিয়ে এবার টোকিও অলিম্পিকের ট্র্যাকে নেমেছিলেন শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইস। চলতি বছরের সেরা টাইমিংও করেছিলেন তিনি। ১০ দশমিক ৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন তিনি চলতি বছরের একটি স্প্রিন্টে। এছাড়া টোকিও অলিম্পিকের সেমিফাইনালেও হেরাহ-এর চেয়ে এগিয়ে ছিলেন প্রাইস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না তিনি। থম্পসন হেরাহ-এর কাছেই হেরে গেলেন। তিনি টাইমিং করলেন ১০ দশমিক ৭৪ সেকেন্ড।
নারীদের ১০০ মিটারে ঝড়ের পূর্বাভাসই ছিল। তেমনটিই ঘটল। আটজনের মধ্যে ছয়জনই ১১ সেকেন্ডের নিচে টাইমিং করলেন। তারকার হাটে শেষ হাসি হাসলেন থম্পসন-হেরাহ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে পরের দুই বিজয়ীও ক্যারিবীয় দেশ জ্যামাইকার। টোকিও থেকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ তিনটিই যাচ্ছে জ্যামাইকায়। শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইস ১০ দশমিক ৭৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতলেন রৌপ্য পদক এবং একই দেশের আরেক স্প্রিন্টার শেরিকা জ্যাকসন ১০ দশমিক ৭৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতলেন ব্রোঞ্জ পদক। এর আগে ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকেও এমন কীর্তি গড়েছিলেন জ্যামাইকানরা।
উল্লেখ্য, টম্পসনের টাইমিং মেয়েদের ১০০ মিটারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা। ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিসে অলিম্পিক ট্রায়ালে ১০ দশমিক ৪৯ সেকেন্ড নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন গ্রিফিত। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের এই সাবেক তারকার চেয়ে মাত্র দশমিক ১২ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে টোকিওতে দৌড় শেষ করেছেন টম্পসন।
ক্যারাবিয়ান দেশ জ্যামাইকার ম্যানচেস্টার প্যারিসে জন্ম থম্পসন-হেরাহর। প্রথমে ক্রিস্টিয়ানা হাইস্কুল এবং পরে ম্যানচেস্টার হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পড়া শেষ করেছেন তিনি। হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়েই দৌড়ে হাতেখড়ি হয় তার। প্রথমে তিনি স্প্রিন্টার ছিলেন না, দূরপাল্লার দৌড়েই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। পরে স্প্রিন্টার হিসেবে গড়ে ওঠেন তিনি। কেবল স্প্রিন্টার না এখন তিনি বিশ্বের দ্রুততম মানবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
টোকিও অলিম্পিকে নেমেছিলেন তিনি শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার মিশনে। এর আগে রিও অলিম্পিকেও সোনা জিতেছিল এই নারী। ২০১৬ সালের রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকে সোনা জয়ের পরের সময়টা খুব একটা ভালো যায়নি টম্পসনের। চোটে ভুগেছেন। ট্র্যাকেও প্রত্যাশিত আলো ছড়াতে না পারায় শুনেছেন বাঁকা মন্তব্য। একে শারীরিক চোট তার ওপর মনের চোট। আশেপাশের মানুষের কথা তার মনে কষ্ট দিলেও তিনি সেসব সমালোচনা গ্রহণ করেছেন অনুপ্রেরণা হিসেবে। সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করে মনোযোগ ধরে রাখা, ছন্দ ধরে রাখাই ছিল তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সব ক্ষতি, হারকে তিনি মানিয়ে নিয়েছেন এবারে সোনা জয়ের মাধ্যমে।
কেবল খেলাতেই নয়, তিনি বিশ্বমঞ্চে স্থাপন করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হোঁচট খেয়ে পড়েও সামলে নিয়েছেন নিজেকে। সকল পরিস্থিতি কাটিয়ে কঠোর পরিশ্রমে ফের অর্জন করেছেন সফলতা। তার থেকে আমাদের সকলেরি শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।