নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী!
"বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"
কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী কবিতা যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিল সেই মহীয়সী নারী। ইতিহাস সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিলেন নারীরাও ইচ্ছের জোরে পৌঁছে যেতে পারে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে। কোন বাধাই যেন বাধা থাকে না দৃঢ় সংকল্পে পথে। তেমন এই এক নারীর সাফল্যের শিখরে আরোহণের গল্প জানবো।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসায় প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিয়োগ পেলেন সিলেটের মাহজাবীন হক। নাসায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের ৭ই অক্টোবর নিজের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন মাহজাবীন হক।
মাহজাবীনের জন্ম সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন সিলেটের খাজা বাড়ি স্কুল এন্ড কলেজে। ও লেভেল এবং এ লেভেল শেষ করেন এখান থেকেই। মাহজাবীন ২০১৯ সালে মিশিগান রাজ্যের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
এরপর ২০০৯ সালে মা ও ভাইয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান মাহজাবীন। প্রথম দু’বছর নিউ ইয়র্ক সিটিতে ছিলেন তারা। ২০১১ সালে মিশিগানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর তিনি ভর্তি হন হামট্রাম্ক হাই স্কুলে। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে তিনি ওয়েইন স্টেইট ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি হন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই মাহজাবীন দুই দফায় টেক্সাসের হিউস্টনে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করেন। প্রথম দফায় সেখানে ডাটা এনালিস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে মিশন কন্ট্রোলে কাজ করেন তিনি।
দুই দফায় ৮ মাস ২টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করার পর তিনি নাসার মিশন কন্ট্রোল সেন্টার (এমসিসি) এ সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। মিশন কন্ট্রোল নাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবন। এখান থেকেই নাসার রকেট উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মেয়ের প্রসঙ্গে বাবা এনামুল হক বলেন, লেখাপাড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকা ও ফ্যাশন ডিজাইনেও মাহজাবীনের আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া সে নাচেও আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই এগুলোর অনুশীলন করেছে মাহজাবীন। ভালো সংগঠক হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে মেধাবী এই তরুণীর। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ২০১৬ সালে সহপাঠী ও বাঙালি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (বিএসএ)। শুরুতে এ সংগঠনের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরের বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাহজাবীন হক বর্তমানে স্থায়ীভাবে মিশিগানে বসবাস করছেন। সাথে আছেন মা ফেরদৌসী চৌধুরী ও একমাত্র ছোট ভাই সৈয়দ সামিউল হক। ভাই সামিউল হক বর্তমানে মার্কিন সেনাবহিনীতে কর্মরত আছেন ।
নারী আজ স্বয়ংসিদ্ধা। তারা এখন কারও উপরে নির্ভরশীল নয়। উল্টো তাদের উপরই দাঁড়িয়ে আছে দেশ ও বিশ্বের সকল সাফল্যের অর্ধাংশ । আবার কখনও তাদের উপরেই নির্ভর করছে কোনও দেশের ভাগ্য কিংবা কোম্পানির ভবিষ্যৎ।