হাইপারসোমনিয়া এক অদ্ভুদ বিপদ
এই জগতে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই লেগেই রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশদ অগ্রগতির কারণে আমরা প্রত্যহ নতুন রোগ সম্পর্কে জানতে পারছি। আবিষ্কৃত সকল রোগগুলো একটি আরেকটির থেকে অনেকটা ভিন্ন। আপনার পাশে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিটি হয়ত এমন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
হাইপারসোমনিয়া হল দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, যেখানে একজন হয়ত দীর্ঘক্ষণ ধরে রাতের ঘুম অথবা দিনের বেলা অত্যাধিক ঘুমভাব উপলব্ধি করতে পারেন। যারা অপর্যাপ্ত অথবা অশান্ত ঘুমের কারণে ক্লান্ত বোধ করেন তাদের তুলনায় যারা হাইপারসোমনিয়ায় ভোগেন তারা সারারাত ঠিক করে ঘুমানো সত্ত্বেও দিনের বেলা লম্বা ঘুম দিতে বাধ্য বোধ করেন। হাইপারসোমনিয়া প্রায়শই অন্য রোগের সাথে জড়িত আর তা রোগীর দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।
সর্বক্ষণ দিনের বেলা অত্যাধিক ঘুমানো বা ঘুম ভাবের অভিযোগ। কাজকর্ম, খাওয়া অথবা এমনকি কথপোকথনের মধ্যের মতো অসময়ে একজন বারবার হালকা ঘুমিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিলেও অত্যাধিক ঘুমভাব কমে না, আর লম্বা ঘুমের পর কারো প্রায়ই বিভ্রান্তিবোধ এবং অস্বস্তি লাগতে পারে।
রোগটি নিয়ে বিভিন্ন লক্ষণ এ দেখা গিয়েছে উদ্বিগ্ন, বিরক্তি বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা, উদ্যম কমে যাওয়া, মন্থর চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া এবং কথাবার্তা, যা সারাদিন ধরে থাকে ক্ষুধামন্দা, কোনও পারিবারিক অথবা সামাজিক সমাবেশ এবং পেশাদারী পরিবেশে কাজ করতে অসুবিধা দেয়।
অন্যান্য স্নায়বিক ব্যাধির মতোই হাইপারসোমনিয়ার কারণও ভালো করে জানা নেই। তবে, শরীরে একটি নির্দিষ্ট অণুর বেশিমাত্রায় উৎপাদন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যা মস্তিষ্কের একটি হরমোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তন্দ্রাভাব বাড়িয়ে দেয়।
সাধারণত কিছু কারণ বিঘ্ন হওয়ার কারণে এই রোগটি হতে পারে, ঘুমের ব্যাধি, যেমন ন্যারকোলেপ্সি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া, অটোনমিক স্নায়ু তন্ত্রের অকার্যকারিতা, মাদক অথবা মদ্যপানের অপব্যবহার।
বিশেষ কিছু রোগ থেকেও ঘুমের এই বিপদটি সৃষ্টি হতে পারে, কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে অথবা মস্তিষ্কে আঘাত নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খাওয়া বা কিছু ওষুধ বন্ধ হওয়া হাইপারসোমনিয়ায় পরিণত হতে পারে, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, উদ্বেগ কমানোর এজেন্ট, অ্যান্টিহিস্ট্যামিনিক ও প্রভৃতি ব্যাধি যেমন একাধিক স্কেলেরোসিস, ডিপ্রেশন, এনসেফালাইটিস, মৃগী অথবা ওবেসিটি’র মতো অসুখও হাইপারসোমনিয়ার কারণ হতে পারে জেনেটিক কারণেও হাইপারসোমনিয়ার হতে পারে, এরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। হাইপারসোমনিয়া সাধারণত কৈশোরাবস্থার আগেই ধরা পড়ে যায়।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং সচেতনতা-বর্ধক এজেন্টের মতো ওষুধ কগ্নিটিভ বিহেভরিয়াল থেরাপি (সিবিটি) সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয় যে রোগীর হাইপারসোমনিয়া রয়েছে। ঘুমানোর ধরণে প্রভাব ফেলে এমন কারণ এড়িয়ে চলা, যেমন রাত অবধি জেগে কাজ করা বা রাতে সামাজিক কাজকর্মে অংশ নেওয়া, মদ এবং ক্যাফিন জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলা।
ঘুম ভালোবাসে নাহ এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু আপনার ঘুমের ব্যাপারে আপনার একান্ত সচেতনতা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুস্থ সুন্দর শরীরই পারে জীবনকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে।