আম্রপালি আমের নামকরণের বিস্ময়কর ইতিহাস
চলছে ভরপুর আমের মৌসুম, বিভিন্ন আম আসছে বাজারে এর মধ্য একটা অত্যন্ত সুস্বাদু আম হচ্ছে আম্রপালি। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই আমের নাম কেন আম্রপালি? এর পেছনে একটা সুন্দর ইতিহাস আছ চলুন জেনে নেই।
আম্রপালি আম নয় সুন্দরী আম্রপালি জন্মেছিলেন আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে ভরতে, তিনি ছিলেন সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী এবং নর্তকী। আম্রপালি বাস করতেন বৈশালী শহরে। মহানামন নামে এ ব্যক্তি শিশুকালে আম্রপালিকে আম গাছের নিচে খুঁজে পান। যেহেতু তাকে আম গাছের নিচে পাওয়া যায় তাই তার নাম রাখা হয় আম্রপালি। কিন্তু শৈশব পেরিয়ে কিশোরে পা দিতেই আম্রপালিকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। দেশ- বিদেশের রাজা- রাজপুত্র সহ সাধারণ মানুষ তার জন্য পাগল হয়ে যান। এ নিয়ে আম্রপালির বাবা – মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ও ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেন তা হল, আম্রপালিকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। সে হবে একজন নগরবধু। মানে সোজা বাংলায় পতিতা। ইতিহাসে এভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কাউকে পতিতা বানানো হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিরল। আম্রপালি সে সভায় ৫টি শর্ত রাখেন।
১) নগরের সবচেয়ে সুন্দর ঘরটি হবে তার।
২) প্রতি রাতের জন্য মূল্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা।
৩) একবারে মাত্র একজন তার গৃহে প্রবেশ করতে পারবে।
৪) শত্রু বা কোন অপরাধীর সন্ধানে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে।
৫) কে এলেন আর কে গেলেন এ নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবে না।
সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেন। প্রাচীন ভারতের মগধ রাজা ছিলেন বিম্বিসার। নর্তকীদের নাচের এক অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচের এ অনুষ্ঠানে তিনি এক নর্তকীর নাচে দেখে বলেছিলেন, এ নর্তকী বিশ্বাসেরা। তখন তার একজন সভাসদ বলেন, মহারাজ এ নর্তকী আম্রপালির নখের যোগ্য নয়। তিনি তার সেই সভাসদের থেকে আম্রপালি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাবার বাসনা করেন। কিন্তু তার সভাসদ বলেন, তাহলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালিকে দেখে আসবেন। দেখা করতে গিয়ে রাজা চমকে ওঠেন, এতো কোন নারী নয়, যেন সাক্ষাৎ পরী। কিন্তু আম্রপালি প্রথম দেখাতেই তাকে মগধ রাজ্যের রাজা বলে চিনে ফেলেন এবং জানান তিনি তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন বহু আগে থেকেই, কিন্তু আম্রপালি জানান, তার রাজ্যের মানুষ কখনোই এটা মেনে নিবেন না। ওদিকে আম্রপালি তার নিজের রাজ্যর কোন ক্ষতি চান না। তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান।
এদিকে বিম্বিসারের সন্তান অজাতশত্রু ও আম্রপালির প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তিনি আম্রপালিকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি এবং খুব বাজে ভাবে আহত হন। এতো নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কি হল?
গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশ সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে এলেন। একদিন বৈশালী রাজ্যে এলেন। একদিন বৈশালী রাজ্যর রাবান্দা থেকে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে আম্রপালির মনে ধরে গেলো। তিনি সেই সন্ন্যাসীকে চার মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করলেন। সবাই ভাবলেন বুদ্ধ কখনোই রাজি হবে না। গৌতম বুদ্ধ তাকে রাখতে রাজি হলেন, এবং এটাও বললেন, সে চার মাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে এটা আমি নিশ্চিত! চার মাস শেষ হলে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আম্রপালির রূপের কাছে শ্রমণ হেরে গেলেন কি না তা জানার জন্য? কিন্তু না, সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন। আম্রপালি তখন বুদ্ধকে বলে, এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালী নগর বধূ আম্রপালি।
পরে সব কিছু দান করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালি। আর এই আম্রপালির নামে ১৯৭৮ সালে ভারতের আম গবেষকরা দশোহরি ও নিলাম এই দুই আমের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং নাম রাখেন আম্রপালি।