নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দৃষ্টান্ত
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ৪৫জন জনবল এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রাপ্ত পদ্মা ও পলাশ নামক দুইটি টহল জাহাজ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নৌযোদ্ধাদের অবদান সর্বদাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১, ১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার (৪৫,৮৭৪ মা) সমুদ্রসীমা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিদেশে মানবিক সহায়তা মিশনে একটি নেতৃত্বস্থানীয় বাহিনী হিসেবে নিরলস সেবাদানে নিয়োজিত রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। স্থলে, জলে (ভাসমান, অর্ধ-নিমজ্জিত ও নিমজ্জিত) থাকার পাশাপাশি আকাশ পথেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী সু-নিপুণভাবে অপারেশনাল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত আছে।
গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১ মতে, নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে সারাবিশ্বের ১৫৬ দেশের মাঝে বাংলাদেশ এখন ৬৫তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এক্ষেত্রে প্রথম। নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ১৪ জন নারী কর্মকর্তা যোগদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের পথযাত্রা শুরু হয়; নিঃসন্দেহে ইহা দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা অর্জনের অন্যতম এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা ঘটায়। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত ৪৪ জন নারী নাবিক বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার র্যাংকিং এ ক্যাডেট এন্ট্রি ও ডিরেক্ট এন্ট্রি উভয় বিভাগেই নারী কর্মকর্তারা যোগদান করছেন। নৌবাহিনীর চার ব্রাঞ্চের মধ্যে কেবল নির্বাহী শাখা ব্যতীত অন্য তিন ব্রাঞ্চেই নারী কর্মকর্তারা সু-নিপুণভাবে নিজেদের যোগ্যতার নিদর্শন রেখে চলছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শতাধিক নারী নাবিক বিভাগে কর্মরত আছেন।
বর্তমানে বানৌজা সমুদ্র জয় এবং সমুদ্র অভিযান এই দুইটি ফ্রিগেটে পূর্ণাংগভাবে নারী নৌকর্মকর্তাদের আবাসন ব্যবস্থার সহিত প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে মানবিক সহায়তা মিশনে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা সেবা প্রদানে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে নারী নৌকর্মকর্তারা বিদেশি মিশনের পাশাপাশি এসএসএফ, র্যাব, ডিজিএফআইসহ নানা নিরাপত্তা বাহিনীতে সফলতার সাথে নিজেদের পদচারণায় বাংলাদেশের নারী ক্ষমতায়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে চলছে।