নারী পুরুষ বৈষম্য: বাবা-মা কতটা দায়ী?
বাবু জন্মের পর বাসায় তেমন কোন ছেলে ছিল না৷ মা ও বাসার অন্যান্য মেয়েদের সাথে থাকতে থাকতে ওর আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো মেয়েদের সাজগোজের জিনিসে, পুতুল খেলায়। আর প্রতিবেলায়ই বাবুকে বাঁধা দেওয়া হত এগুলো মেয়েদের জিনিস, পুতুল খেলা মেয়েদের খেলা। বছর পাঁচেক পর বাবুর ছোট বোন আসলো। আর বোনের আগ্রহ হত বাইরে বের হয়ে ভাইয়ের সাথে, তার বন্ধুদের সাথে খেলার। কিন্তু ভাইয়ের এক কথা। মেয়েরা আবার বাইরে খেলতে যায়! কখনো ছোট বোন বাবুর খেলার বলে হাত দিয়েছে বলে বাবু বলেই বসলো বল কি মেয়েদের খেলা? বৈষম্য তো এখানেই শুরু। তারপর তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সমাজের আনাচে-কানাচে।
এই বৈষম্যের জন্য কি তবে বাবা মা দায়ী?
দৃঢ় গলায় এখন যদি 'হ্যাঁ' বলা হয় তবে বাবা মায়েরা হয়তো বেশ খানিকটা অবাক হবেন এই ভেবে যে আপনি কিভাবে আপনার সন্তানের মধ্যে বৈষম্যপূর্ণ মনোভাবের জন্য দায়ী?
ছোট বাচ্চা ছেলেটার পুতুল দেখে ভালো লেগেছে বলে আপনি তাকে বলেছেন হয়তো, 'পুতুল নয় বাবা,তুমি একটা বল নাও। ছেলেবাবুরা কি পুতুল খেলে?' আর সেদিন আপনার ছেলে জেনে গেছে পুতুল খেলা শুধু মেয়েদের জন্য। আর মেয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন রঙ বেরঙের পুতুল। পুতুল খেলতে খেলতে আপনার ছোট্ট মেয়েটি জেনে গেছে তার জীবন মানেই পুতুলের মতই ঘর সংসার যত্নে সামলে রাখা।
এভাবেই একটু একটু করে আপনার সন্তানের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের বৈষম্য তৈরি হয়ে গেছে। আপনি অসচেতন অবস্থায় যা টেরই পেলেন না।
অথচ যদি আমাদের বেড়ে উঠাটা বৈষম্যপূর্ণ না হত তবে এত এত আন্দোলন, প্রতিবাদ কিংবা নারীবাদী হওয়ার দরকারই হত না।
প্রথম সন্তানটি ছেলে হোক রোজগার করে সংসারের হাল ধরতে পারবে। বড় মাছের মাথাটা ছেলেই খাক ওতো বাইরে কাজ করবে। এমন মানসিকতার সমাজ থেকে যারা বেড়ে উঠেছে তারাও এখন নিজেদের সন্তানের বেলা কিছুটা প্রগতিশীল হলেও পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি। আর সময়টা এখনই এ সমাজকে বৈষম্যহীন করে তোলার। সেই পদক্ষেপও নিতে আজকের বাবা মায়েদের। নিজের সন্তানের মধ্যে বৈষম্যের বিকাশ না ঘটিয়ে তার মধ্যে বৈষম্যহীন মনোভাব গড়ে দিন।তবেই দিন বদলে যাবে, বদলে যাবে এই ত্রুটিপূর্ণ সমাজ।