নারী পাচার রোধে চাই আইনি তৎপরতা
ভারতের বেঙ্গালুরুতে এক বাংলাদেশি তরুণীর ওপর নির্যাতনের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সংঘবদ্ধ নারী পাচার চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। টিকটক মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাচার করা হয়েছে।
পাচার হওয়া এক তরুণী কৌশলে দেশে ফিরে আসার পর অপর এক বাংলাদেশি নারীর ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে। এই ভিডিওটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায় এর পিছনে রয়েছে বিরাট একটি চক্র যারা দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পনার মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করে। ভারতে নারী পাচার চক্রের ‘মূল হোতা’ ঝিনাইদহের আশরাফুল ইসলাম ওরফে বস রাফিস। আশরাফুল আলমের সহযোগী টিকটক হৃদয় বাবু অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণীদের মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করে। তরুণীদের মডেল বানানোর প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাদের প্রথমে আকর্ষণ করা হতো। পরে তাদের বিভিন্ন সুপার মার্কেট ও পাশের দেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আশরাফুলের সহযোগিতায় বিদেশে পাচার করত ওই গ্রুপ।
বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। এ চক্রের সদস্যরা ধরা পড়েছে। কিন্তু এখানেই শান্তি নেই। দেশে এরকম আরা কত চক্র আছে তা এখনও আমাদের অজানা। এভাবে আরও কত চক্র প্রলোভন বা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নারী পাচারে নিয়োজিত তা আমরা নিশ্চিত বলতে পারিনা। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা উচিত। এ পাচার চক্রের সদস্যরা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয়। তারা সেখানে কাদের সহায়তায় এ অপরাধে নিয়োজিত ছিল, অবৈধভাবে ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রেই বা তারা সীমান্তে কাদের সহায়তা পেয়েছে-এসব তথ্যও উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন।
এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু পাচার হয়েছে। প্রতিবছর ২০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে যায়। অপর এক হিসাবে দেখা যায়, ভারতে অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে ৫০ হাজার নারী পাচার হয়ে গেছেন। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজের প্রলোভনে নারী ও শিশু পাচার হওয়ার তথ্য রয়েছে। তবে টিকটক প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নারী পাচারের ঘটনাটি অভিনব।
এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিকটক প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গত আট বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ভারতে পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে। টিকটকের মডেল বানানো এবং উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এসব নারীকে পাচার করা হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি মেয়ে পাচার হয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। চাকরি দেওয়ার নাম করে তাদের যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রদারি চলছে। সীমান্ত বন্ধও ছিল বেশ কিছুদিন। এরপরও পাচারকারী চক্র কীভাবে নির্বিঘ্নে এসব অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে? দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা কি করছেন? দুই দেশের সীমান্ত-রক্ষীরাই এই পাচারের দায় এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে আইনি তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে। এসব কুচক্রে পড়া থেকে সকলকেই সকলকেই সজাগ থাকতে হবে। নিজে ও নিজের পরিবার ও আশেপাশের মানুষকে এসব চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।