Skip to content

১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেনোপজের সময়ও নারী হবে অপরাজেয়

একজন মা তার জীবনের সমস্তটাই বিলিয়ে দেন সন্তান লালন পালন আর সংসার সামলানোতে। জীবনের উদ্দেশ্য তিনি তাঁর সংসার জগতে গুটিয়ে নিতে থাকেন।।ভুলেই যান নিজের কথা। নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার কথা। 

৪০-৪৫ বছর বয়সে যখন একজন নারী মেনোপজের সময় অতিক্রম করেন।মেনোপজ হচ্ছে, একটি নারীদেহের অনেক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাবার কারণেই মেনোপজ হয়। যে সময় নারীর মাসিক আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবার সময় হয় সে সময়কেই মেনোপজের সোময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

এসময় নারীরা শারিরীক জটিলতায় তো ভোগেন ই। সাথে মানসিক অশান্তিতে ভোগার সম্ভাবনা অনেক অনেক অংশে বেড়ে যায়।এ সোময় নারীদেহে সন্তান ধারণ করার মত ডিম্বানু এঁর জন্ম নেয়না। অনেকেরই বাহ্যিক সৌন্দর্য আস্তেধীরে কমে যেতে থাকে। তাই ডিপ্রেশন, মুডসুইং, মেজাজ খিটখিটে হওয়ার পাশাপাশি আত্নহত্যা প্রবণতাও দেখা যায় অনেকের মাঝে। 

মেনোপজের তিনটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো হলো, প্রি-মেনোপজ, মেনোপজ, পোস্ট-মেনোপজ।

মেনোপজ শুরু হওয়ার আগের সময় কে বলা হয় প্রি-মেনোপজ।এ সময় থেকেই মেনোপজের অনেক লক্ষণ লেখা দিতে শুরু করে।তবে এসময়ের লক্ষণ গুলোকে অনেকেই অবহেলা করেন। এ অবহেলার জন্য প্রায়শই দুর্বিপাকে পড়তে হয় অনেক নারীকে। কিন্তু  আগে থেকে মেনোপজের লক্ষণ জানলেই নারীরা নিজেদের  সুরক্ষা নিজেরা নিশ্চিত করতে পারবেন। 

যেহেতু নারীদেহে হরমোনের উঠানামা পুরুষদেহের তুলনায় দ্রুতগতিতে হয়, সেহেতু নারীরা অনেকেই স্পর্শকাতর হয়ে থাকেন।তাতে বিচলিত হবার কিছু নেই। মেনোপজও যেহেতু শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেহেতু হরমোন পরিবর্তনের জন্য অনেক লক্ষণই দেখা দিতে পারে। 

যেমন, 

চুল পড়ে যাওয়াঃ  বয়সের সাথে সাথে চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। মেনোপজের কারণে ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন এর উৎপাদন কমে যায়। যার কারণে চুল পাতলা হওয়া শুরু হয়।তবে এ বিষয়টি স্থায়ী নয়। 

হট ফ্ল্যাশঃ যখন তখন হঠাত করে অতিরিক্ত গরম লাগা শুরু হয়।সেটা গরমকাল থাকুক কিংবা শীতকাল।তবে এক্ষেত্রে ঘাবড়ে যাওয়া যাবে না।ঠাণ্ডা পানি আর সুতির পোশাক এক্ষেত্রে সহায় ভূমিকা রাখে।

মুড সুইংঃ মেনোপজের সময়  সেরেটোনিন এবং ডোপামিন হরমোন এর ইমব্যালান্স দেখা দেয় শরীরে।এর ফলে মুড সুইং হয় । মেজাজ ও খিটখিটে থাকে। স্ট্রেস ও থাকে প্রচুর।এই পরিবর্ত্নশীল আচরণের জন্য হতাশায় ভোগেন অনেক নারী। এ সময় পরিবারের সদস্য আর মন ভালো করা কাজের প্রতি সময় ব্যয় করলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকবে। 

জয়েন্ট পেইনঃ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে। যেমন হাঁটু ,কুনুই, আঙুল, পিঠ। এছাড়া আগের কোন ব্যথা থাকলেও সেটাও এসময়ে ফিরে আসতে পারে।ফিজিওথেরাপি এই সময়ের জন্য অনেক উপকারী।

অনিদ্রাঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনিদ্রা প্রায় অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তবে মেনোপজের সময় এই প্রবণতা আরো বাড়তে পারে। আবার ঘুম হলেও শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকা, প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া এবং ঘুম হলেও, দিনের বেলায় বার বার ঘুম আসার মত সমস্যা দেখা দেয়।

মেনোপজের সময় আংশকা খুব বেশী থাকে রক্তশূন্যতা হওয়ার। তাই এসময়ে নারীর খাদ্য তালিকা বাছাই করতে হবে পুষ্টিকর সব খাবার। যে সকল খাবারে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় সে সব খাবার তালিকাবদ্ধ করতে হবে।

ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার, ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং বিভিন্ন মাল্টিভিটামিনও খাওয়া যেতে পারে।স্বাস্থ্যকর শাকসবজি অনেক মিনারেল যোগান দিতেও সক্ষম। বয়সের সাথে সাথে যদি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা হয়, তবে নারী স্বাস্থ্য আরো উন্নত হবে। 

মেনোপজ এর অভিজ্ঞতা সব নারীকেই পার করতে হয়। কিন্তু জীবনে এত শারীরিক এবং মানসিক  বাধাধরা সহ্য করেও নারীরা শুধু নিজেকেই না, তাঁর পরিবারকেও সর্বদা গুছিয়ে রাখেন। এই গুছিয়ে রাখাটা আমরা প্রায়ই অবহেলার চোখে দেখি। 

যেসকল নারীরা এখন মেনোপজের সময় অতিক্রম করছে তাঁরা এখন কারো মা , কারো স্ত্রী।কাজেই পরিবারের মানুষ দের উচিত মেনোপজের সময় তাঁর মা এবং স্ত্রীকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করা। এতে মেনোপজের সময় পার করা নারীটি মানসিক অসহায়ত্বে ভুগবেন না। হাসিখুশি থেকে নিজের স্বাস্থ্য সচেতন হবেন এবং অন্যদেরও হাসিখুশি রাখবেন। 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ