রোজিনারা থেমে গেলে থেমে যাবে সত্য
প্রীজনভ্যানে করে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে জীবন আহমেদের তোলা সেই ছবি সকলের হৃদয়ে গেঁথে গেছে। যেন রোজিনা ইসলামকে নয়, প্রীজনভ্যানে করে নিয়ে গেল সত্য বলার সাংবাদিকতাকে।
রোজিনা ইসলামের কাজের জন্য তার সুখ্যাতির কথা কমবেশি আমরা সবাই জেনেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের 'নয় ছয়ে সতেরো' মিলানো কোন গোপন নথির ছবি তুলেছেন বলে রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগার থেকে তার মুক্তিও মিলবে নিশ্চয়ই।
কিন্তু জামিন পেয়ে রোজিনা ইসলাম কি করবেন? মনে আসেনি এই প্রশ্ন? যে গোপন নথি নিয়ে এত হেনস্তা এত হয়রানি, প্রকাশ পাবে কি সেই নথির গল্প? নাকি তিনি এই হেনস্তা হয়রানির সাথে সাথে থামিয়ে দেবেন সত্য উদঘাটনের লড়াই। আড়ালে হারিয়ে যাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। যে সাংবাদিকতা জাতির আয়না হিসেবে কাজ করে। যে সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির স্বার্থে এভাবে জীবন বাজি রেখে লড়ে। ক্ষমতার অপব্যবহারে থেমে যাবে সে সাংবাদিকতা।
না তা হয়তো হবে না। রোজিনা ইসলাম হয়তো থেমে যাবে না। কিন্তু তাকে ঘিরে যে হেনস্তা, হয়রানিমূলক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কি প্রভাব ফেলবে না ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের উপর!
ফেলবে তো নিশ্চয়ই। অনুসন্ধানী বলি আর নারী সাংবাদিকতা বলি, যে ভাবমূর্তি আজ তৈরি হয়েছে তা ভবিষ্যতে নারী সাংবাদিকদের পথ আরো কঠিন করে দিয়েছে। নারীদের জন্য সাংবাদিকতা কতটা চ্যালেঞ্জিং তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। আমাদের এই রক্ষণশীল সমাজে এই ভাবমূর্তি নারীদের ভবিষ্যতে সাংবাদিকতায় আসা, সত্যের জন্য কাজ করার পথে নিরাপত্তা নামক বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না!
এই যদি হয় নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তবে কমে যেতে পারে সত্যের জন্য সাংবাদিকতা, কমে যেতে পারে নারী সাংবাদিকতা, কমে যেতে পারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা৷ তবে যে আজ জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন থেকে যায় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সত্য, কোথায় যাবে দেশ,জন্মভূমি, কি পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? কি দেখবে তারা? শতশত পুলিশী নিরাপত্তায় রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কারাগারে সেই চিত্র?