মে দিবসের ইতিহাস
আজ পহেলা মে দিবস বা শ্রমিক দিবস। হাজারো খেটে-খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে এ দিনটি পালিত হয়।বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ‘মে দিবস’কে শ্রম দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
১৮৮৬ সালের এই দিনে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের মার্কেটের শ্রমিকরা শ্রমের উপযুক্ত দাম এবং প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামে। সে সময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি পুলিশ চালায়। পুলিশের গুলিতে বহুসংখ্যক শ্রমিক নিহত ও আহত হন। শ্রমিকদের রক্তে ভেজা শার্ট নিয়ে মিছিল এগিয়ে চলে। ধীরে ধীরে আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নেয়।
এরপর ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে।সেসময় ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সেই আহ্বানে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১- মে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলস্বরূপ শ্রমিকদের প্রতিদিন কাজের সময় ১৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা করা হয়। গোটা বিশ্বের সকল দেশের শ্রমিকরা এর মাধ্যমে তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করে। নিজেদের অধিকার আদায়ে তারা সোচ্চার হয়ে উঠে।
বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি।
বাংলাদেশে শ্রমিক দিবস সরকারি ছুটির দিন। এই দিবসের মধ্য দিয়েই শ্রমিকরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ করে মজুরি আদায়ে, সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়।