Skip to content

৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বামীর একাধিক বিয়ে, জড়িয়ে আছে নারীর সম্মান! 

'একাধিক বিয়ে' বর্তমানে দেশে বেশ আলোচিত-সমালোচিত টপিক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ বুলালে দেখা মেলে হাজার হাজার মানুষের মতামতের।  কেউ আইনি দিকে ব্যাখ্যা করছে তো কেউ ব্যস্ত ধর্মীয় ব্যাখ্যায় আবার কেউ কেউ খুঁজছেন সামাজিক ব্যাখ্যা। কিন্তু আগাগোড়া স্বামীর একাধিক বিয়ের সাথে জড়িয়ে আছে নারীর সম্মান। কিন্তু এ বিষয়ে কতটুকু সম্মান পাচ্ছেন নারী? 

সম্প্রতি 'একাধিক বিয়ে'র ইস্যুটি আলোচনায় আসে হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক কাণ্ডকে ঘিরে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করার সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব  মামুনুল হককে ঘেরাও করেন এলাকাবাসী। ওই দিন তিনি জানান, সঙ্গে থাকা নারী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। 

ওই ঘটনার পাঁচ দিন পর মামুনুল হক লাইভে এসে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে কথা বলেন।  একপর্যায়ে তিনি বলেন, প্রিয় দেশবাসী, 'আমি একাধিক বিয়ে করেছি, শরিয়তে ইসলামে একজন মুসলিম পুরুষকে চার চারটি বিয়ে করা অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। দেশীয় আইনেও চার বিবাহ করার প্রতি কোন নিষেধাজ্ঞা বা কোন ধরনের অনুৎসাহ নেই। কাজেই আমি যদি চারটি বিবাহ করি, তাহলে এতে কার কি?'

 

তার দাবী অনুযায়ী  দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। তা ছাড়া রিসোর্টে স্ত্রীর নামও সঠিক বলেননি মামুনুল হক। এক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। ইসলামী শরিয়তে পুরুষের জন্য  একাধিক বিয়ের অধিকার রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু শর্ত। ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনসহ সকল ক্ষেত্রে শতভাগ সমতা বিধান নিশ্চিত করা না গেলে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ বৈধ নয়।

 

সূরা আন নিসার আয়াত ৩ অনুসারে, আল্লাহ তা'আলা বলেন,  "তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)…।"  

 

অন্যদিকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। তবে কোন ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।এ ক্ষেত্রে তাকে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ এবং এই বিয়েতে বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি রয়েছে কি না, তা উল্লেখ করতে হবে। 

সালিসি পরিষদের লিখিত অনুমতি নিয়েই কেবল দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে। সালিসি পরিষদে যদি বর্তমান স্ত্রী অনুমতি প্রদান না করেন, তাহলে কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। 

সর্বোপরি দেখা যায়, আইন এবং ধর্ম উভয়ক্ষেত্রেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে নারীকে, নারীর অধিকারকে। কিন্তু এসব আইন লঙ্ঘন করে একাধিক বিয়েতে সাধারণত প্রকাশ পাচ্ছে নারীর অসম্মান।  প্রথম স্ত্রী অনুমতি ব্যতীত, তার থেকে সত্য গোপন করে একাধিক বিয়ে যেন নারীর প্রতি অবহেলারই বহিঃপ্রকাশ।  আর এমন অবহেলা, অসম্মান থেকেই সূত্রপাত হয় নারীর প্রতি সহিংসতার।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ