করোনা ভাইরাস ও ভিটামিন ডি
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ মহামারি শুরু হওয়ার গোড়া থেকেই নানা ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণের বিষয়টির দিকে বিশ্বজুড়েই আলোচনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর সাথে ভিটামিন ডি নিয়ে অনেক তথ্যই শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সব তথ্যই যে সঠিক এমন নয়। আজ কোভিড-১৯ ও ভিটামিন ডি এর সম্পর্কে জানবো।
ভিটামিন ডি-কে কোভিড চিকিৎসা বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন মনে করার পিছনে কিছু কারণ হয়ত আছে। ভিটামিন ডি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ডি খেলে রোগ প্রতিরোধ করা বা চিকিৎসা সম্ভব আজ পর্যন্ত কোন গবেষণায় সেই প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এর অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যৎ এও কোন পরিবর্তন ঘটবে না।
কোভিড-১৯–এর সঙ্গে ভিটামিন ডির সম্পর্ক নিয়ে দুনিয়াজুড়ে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, শীতপ্রধান দেশে, বিশেষ করে যে মাসগুলোতে দিনের পরিধি আর সূর্যের আলো সবচেয়ে কম ছিল, তখনই এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি মানুষকে আক্রমণ করেছে। ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন যে যাঁদের ভিটামিন ডি স্বল্পতা আছে, তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ (১৭ শতাংশ) কোভিড-১৯–জনিত জটিলতা বা মৃত্যুর শিকার হয়েছে।
অনেকগুলো জরিপে দেখা গেছে যে ভিটামিন-ডি এবং কভিড সংক্রমণের পরিণাম – এ দুয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এগুলো হচ্ছে পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া প্রমাণ। এর অর্থ হল এখানে কোভিড আক্রান্ত হবার পর ভিটামিন-ডি ঘাটতি আছে এমন লোকদের ক্ষেত্রে কি ঘটেছে, তার সাথে উচ্চতর মাত্রার ভিটামিন ডি আছে এমন লোকদের কি ঘটেছে – তারই তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে রোগীদের ওপর অন্য যেসব প্রভাবক কাজ করেছে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি।
এগুলো তাই সর্বোচ্চ স্তরের বা 'গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড' তথ্যপ্রমাণ নয়। সেটা পেতে হলে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ট্রায়াল চালাতে হয় – যাতে কিছু লোককে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি দেয়া হয়, অন্য আরো কিছু লোককে দেয়া হয় একটি 'ডামি'। যাতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে চিকিৎসার যে ফল পাওয়া যাচ্ছে – তা ওই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের কারণেই হচ্ছে।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের সারা বছর ধরে ভিটামিন ডি খেতে বলা হয়। কিন্তু ভিটামিন-ডির ঘাটতির সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা শুধু যথাযথ গবেষণার পরই বলা সম্ভব।
তবে এটা ঠিক যে পর্যবেক্ষণবিত্তিক জরিপে দেয়া যায়, কিছু গোষ্ঠীর মানুষদের ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকার এবং কোভিডে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। যেমন – যারা বয়স্ক মানুষ, যারা মোটা হয়ে গেছেন, বা কৃষ্ণাঙ্গ বা দক্ষিণ এশিয়ান জনগোষ্ঠীর মানুষ যাদের ত্বকের রঙ অপেক্ষাকৃত কালো বা বাদামী।