সঙ্গীতধর্মী রোমান্টিক ছবি ‘লা লা ল্যান্ড’
মার্কিন রোমান্টিক সংগীতধর্মী কৌতুকপূর্ণ নাট্য চলচ্চিত্র ‘লা লা ল্যান্ড’ মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র সেবাস্টিন ও মিয়া মন কেড়েছে দর্শকদের। এই চরিত্রগুলিতে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হয়েছে রায়ান গসলিং ও এমা স্টোন। চলচ্চিত্রটি রচনা এবং পরিচালনা করেছেন ড্যামিয়েন শ্যাজেল। এই চলচ্চিত্রের গানগুলোও অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই চলচ্চিত্রের নাম দেয়া হয়েছে খুব বুদ্ধিমত্তার সাথেও লা লা ল্যান্ড দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস শহরকে এবং বাস্তবতার স্পর্শের বাইরে বাগধারা বোঝানো হয়েছে।
এই চলচ্চিত্রে লস অ্যাঞ্জেলস এর একজন জ্যাজ পিয়ানো বাদক ও উঠতি নায়িকার প্রেম কাহিনী ফুটে উঠেছে, যার সমাপ্তি ঘটেছে বিচ্ছেদে। ছবিটির প্রথম ভাগে মিয়া ও সেবাস্টিনের স্ব স্ব ক্যারিয়ার ও আবেগ-অনুভূতিগুলো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মূলত এজন্যই দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। অনেকক্ষণ পর মিয়া ও সেবাস্টিয়ান প্রথমবার আড্ডায় মিলিত হওয়ার পর দর্শকরা ধরেই নিয়েছিল, এবার নির্ঘাত প্রেমে পড়বে তারা! কিন্তু তা হয়নি। আরেকটি দৃশ্য আছে এমন- এক পুল পার্টিতে সেবাস্টিয়ান আশির দশকের জনপ্রিয় একটি গান পরিবেশনের সময় তাকে উপহাস করে মিয়া। পরে সেবাস্টিয়ানের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনায় বাজানো জ্যাজ সংগীতের তালে তার নাচ দেখে বোঝা গেছে, ছেলেটিকে সৃজনশীল হওয়ার উদ্দীপনা যোগাতেই আগে ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করেছে মেয়েটি।
মিয়া ডোলান একজন প্রতিষ্ঠিত নায়িকা হওয়ার প্রচেষ্টায় একের পর এক অডিশন দিয়ে যাচ্ছেন। এর ফাঁকে হলিউডে স্টুডিও এলাকায় অবস্থিত একটি কফি শপে কাজ করে। অন্যদিকে সেবাস্টিন উইল্ডার জ্যাজ পিয়ানো বাজায়। পেশার প্রতি সে পুরো অন্তঃ প্রাণ। তবে গোঁয়ার্তুমির কারণে পেশায় উন্নতি করতে পারেনি। তার স্বপ্ন হল একদিন নিজের একটি জ্যাজ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা। মিয়া প্রথমদিকে জ্যাজ সংগীত একদম পছন্দ করতোনা। কিন্তু পরবর্তীতে সেবাস্টিনের সুবাদে মিয়া ক্রমে জ্যাজ সংগীতকে ভালবাসতে শুরু করে।
একদিন আরেকটি অডিশনে ব্যর্থ হওয়ার পর নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে মিয়া। তবে সেবাস্টিয়ান জানে, মিয়া একদিন সাফল্য পাবেই। সে মিয়াকে আরেকবার চেষ্টা করার জন্য রাজি করিয়ে ফেলে। কিন্তু মিয়া দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় যখন সেবাস্টিয়ান একটি জনপ্রিয় ব্যান্ডে কিবোর্ড বাদকের কাজ পায়! কারণ তার ধারণা, ছেলেটি হয়তো এবার তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সেবাস্টিন আত্মবিশ্বাসী ছিল যে গুণ পরীক্ষা সফল হয়েছে, দাবী করে যে মিয়া নিজেকে মনেপ্রাণে নিজেকে উৎসর্গ করা উচিৎ এই সুযোগের জন্য। তারা ব্যক্ত করে তারা একে অপরকে ভালবাসবে সবসময় কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত।
এরপর পাঁচ বছর পরের ঘটনা দেখা যায়, মিয়া একজন প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী। সে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে, এবং তাদের একটি মেয়েও রয়েছে। তারা সুখেই রয়েছে। এক রাত্রে এ দম্পতি একটি জাজ বারে যায়। মিয়া সেবাস্টিনের লোগো দেখে বুঝতে পারে অবশেষে সেবাস্টিন তার নিজস্ব ক্লাব খুলেছে। সেবাস্টিন মিয়াকে দেখতে পায় ভিড়ের মধ্যে স্পষ্ট বিচলিত। সে তাদের প্রেমের সুরটি বাজায় এবং যার মধ্যে তারা দুজনে কল্পনা করে যে তাদের সম্পর্ক যদি ঠিকঠাকভাবে যেত তাহলে হয়তো তারা এভাবেই হয়তো ঘুরতে আসতো। গানটি শেষ হলে মিয়া তার স্বামীর সাথে বের হয়ে যায়। আসার সময় তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।
লা লা ল্যান্ড ছবিটি সবার কাছেই অত্যন্ত পছন্দের। পর্দায় চিত্রায়িত পিয়ানোর সব দৃশ্যে অভিনেতা রায়ান গসলিং নিজেই বাজিয়েছেন। ছবিটির জন্য তিন মাস পিয়ানো বাজানো শিখেছেন তিনি। নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন দক্ষ। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলোর একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় লা লা ল্যান্ডকে। ছবিটি ৭৪ তম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে মনোনীত সাতটি বিভাগেই পুরস্কার জিতে সর্বোচ্চ ও সকল বিভাগে পুরস্কার জিতার রেকর্ড ভেঙ্গেছিল। এছাড়াও এটি ৭০ তম ব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কারে ১১টি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে এবং পাঁচটিতে পুরস্কার লাভ করে। এই সিনেমার প্রতিটি গানই মন কেড়েছে দর্শকের। এই চলচ্চিত্রটি ভালো লাগবে আপনারও।